যেভাবে দেশের অর্থনীতির গতিপথ পাল্টে ফেলেছেন শেখ হাসিনা
মিথ্যা অভিযোগে পদ্মা সেতুতে ঋণ চুক্তি বাতিল করলো বিশ্ব ব্যাংক। ষড়যন্ত্রকারীদের সে কি উচ্ছ্বাস! কিন্তু দেশের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু কন্যা। শেখ হাসিনা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বললেন, ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করব’। তখন অনেক মানুষই মনে করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী হয়তো কথার কথা বলছেন। অর্থনীতির পণ্ডিতরা বললেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু অসম্ভব। তবে, সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। বার্তা দিয়েছেন শেখ হাসিনা চাইলে কোন কিছুই অসম্ভব নয়।
শেখ হাসিনা এমন সব প্রকল্পের কথা চিন্তা করেছেন, যা স্বপ্নেও ছিল না বাংলাদেশের অনেকের। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ও মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অসংখ্য মেগা প্রকল্পের রূপকার দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৬ জানুয়ারি ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। সেই থেকে নতুন বাংলাদেশের শুরু। ডিজিটাল বাংলাদেশ। টানা তিন মেয়াদে দেশ পরিচালনা করছেন শেখ হাসিনা।
খাদ্য ঘাটতির দেশ ছিল বাংলাদেশ। সেই দেশ এখন সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, ধানে চতুর্থ, মাছে চতুর্থ, আলুতে সপ্তম, আমে সপ্তম, পেয়ারায় অষ্টম এবং খাদ্যশস্য উৎপাদনে দশম স্থানে। এসবই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেয়া নানা উদ্যোগের কারণে।
দেশে শিল্পোন্নয়ন বিকাশের প্রধান বাঁধা ছিল বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সরবরাহ। একদমই তলানি থেকে ২০২১ সালে দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত লোকসংখ্যা ২০০৫-০৬ সালের ৪৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৯৯ শতাংশেরও বেশি। এবছরই বাংলাদেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সেবার আওতায় আসবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে প্রায় ৩২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে রামপাল, পায়রা, বাঁশখালী, মহেশখালী ও মাতারবাড়ী এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে।
শহর ও গ্রামের দূরত্ব ঘোচাতে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে, হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গাসহ ৪৫৩ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চার বা তার বেশি লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ঢাকা-সিলেটসহ আরও ৬৬১ কিলোমিটার মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্প। দেশের মোট প্রবৃদ্ধির ৬ থেকে ৮ শতাংশ আসে এই খাত থেকে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারক দেশ- বাংলাদেশ। দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত পোশাকশিল্প। এ খাত থেকেই আসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজার সুনাম নষ্টের চেষ্টা চলেছে অনেক, এখনো চলছে। এসব বাঁধা পেড়িয়ে বিশ্বের দশটি সেরা গার্মেন্টেসের সাতটি এখন বাংলাদেশে।
মহামারি করোনাভাইরাসের আঘাতে বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত। অথচ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ছাড়িয়েছে ৪৮ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশকে এখন বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলোও দেখে সম্মানের চোখে। প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ইকোনমিস্টের ২০২০ সালের বলছে, ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান নবম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনিক লিগ টেবল ২০২১ এর হিসাবে, ২০৩৫ সালে বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান হবে ২৫তম। বর্তমানে এই অবস্থান ৪১তম।
সফল রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ২০০৯-২০১৯ পর্যন্ত এক দশকে বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শতকরা ১৮৮ ভাগ। যা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন ও ভারতের চেয়েও বেশি। এসময়ে চীনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭৭ ভাগ ও ভারতের ১১৭ ভাগ।
এভাবে চলতে থাকলে ২০৩৩ সালের মধ্যে মালয়েশিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশকেও টপকে যাবে বাংলাদেশ। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ১২টি দেশকে টপকে গেছে। আগামী ১৫ বছরে টপকে যাবে আরও ১৭টি দেশকে।
দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি এগোচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। অর্থনীতি ও আর্থ-সামাজিক বেশিরভাগ সূচকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সবগুলো দেশকে। শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ এখন উন্নত দেশ হওয়ার পথে।