কে এই শিক্ষক এটিএম মোস্তফা? এ যুগের সম্রাট শাজাহান
সাদাকালো নিউজ
স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন এটিএম মোস্তফা কামাল নামে এক শিক্ষক। স্ত্রীর চলে যাওয়ার ১৬ বছর পরও তাঁর সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। যাতে দূরে যেতে না হয় এ কারণে বাড়ির উঠোনের পাশেই সমাহিত করেছেন প্রিয়তমা স্ত্রীকে। ৭৪ বছর বয়সী এই শিক্ষকের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের চান্দামারী গ্রামে। স্ত্রীর সমাধির পাশে বসেই দিনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেন তিনি।
স্ত্রীর পাশে বসে বেশিরভাগ সময় কোরআন পাঠ করেন মোস্তফা কামাল। কখনও তসবীহ, আবার কখনও বা পত্রিকা পড়েন। সমাধির পাশে বসে এ পর্যন্ত ৯৫ বার কোরআন খতম দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক।জানা গেছে, এটিএম মোস্তফা কামাল রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি অবসরে যান। ২০০৬ সালের ১৪ নভেম্বর তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম ৪৩ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। এরপর বাড়ির প্রবেশ পথের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হয়। সেই সমাধির পাশে বসেই এখন সময় কাটছে ওই শিক্ষকের।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দাম্পত্য জীবনে খুব সুখে সংসার করেছেন তাঁরা। বিয়ের পর একে অপরকে ছেড়ে একটি রাতও কাটাননি। নিঃশ্বাস থাকা অবস্থায় রেখা বেগম তাঁর স্বামীর সেবাযত্নে কোনো ত্রুটি রাখেননি।
ছেলে রাজীব ফেরদৌস শুভ্র বলেন, ‘মায়ের চলে যাওয়ার ১৬ বছর অতিবাহিত হতে চলছে। বাবা তাকে একবারেই ভুলতে পারেননি। মনে হয় কয়েকদিন আগেই মা পরপারে গেছেন। পারিবারিক কাজে বাবা কখনো বাজারে গেলেও দ্রুত কাজ শেষ করে বাড়িতে ফেরেন। এসেই মায়ের সমাধির স্থানে গিয়ে বসেন। রাত জেগে নামাজ এবং কোরআন তেলাওয়াত করে মায়ের জন্য দোয়া করেন।’
স্থানীয়রা বলছেন, সম্রাট শাজাহানের মতো শিক্ষক মোস্তফা তাজমহল নির্মাণ করতে পারেননি। তবে স্ত্রীর প্রতি গভার ভালোবাসা দারুণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এটিএম মোস্তফা কামাল জানান, আমার স্ত্রী চলে যাওয়ার পর প্রতিটি দিন-রাত আমার কাছে অপূর্ণ মনে হয়। তাঁকে ভুলতে পারি না। তার চলে যাওয়ার পর আমি প্রতিদিন ফজরের নামাজের আগে ও পরে এবং অন্যান্য সময় মিলে এ পর্যন্ত ৯৫ বার কোরআন খতম করেছি। আমি সব সময় আল্লাহর কাছে তার জন্য জান্নাত কামনা করি।’