প্রাণ গোপাল দত্তের চিকিৎসক থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার গল্প
জহুরা প্রিতু
প্রাণ গোপাল দত্ত। বাংলাদেশে নাক, কান, গলা রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি তাঁর। সামলেছেন দেশের চিকিৎসা শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিকিৎসক হিসেবেও চেনেন অনেকে। চিকিৎসা সেবায় ভূমিকা রাখায় পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার। এবার তাঁর খ্যাতির মুকুটে যোগ হল নতুন পালক। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদে যাচ্ছেন তিনি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে।
প্রাণ গোপালের জন্ম ১৯৫৩ সালের পয়লা অক্টোবর। কুমিল্লার চান্দিনায় বড় হয়েছেন। পড়াশোনার শুরুও সেখানেই। মাধ্যমিক পাস করেন ১৯৬৮ সালে। এরপর ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে।
প্রাণগোপাল উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন ১৯৭০ সালে। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইচ্ছা ছিল সেখানেই পড়াশুনা করার। কিন্তু তাঁর বাবার ইচ্ছা ভিন্ন। তিনি ছেলেকে চিকিৎসক বানাতে চেয়েছিলেন। বাবার ইচ্ছা পূরণে প্রাণগোপাল ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে।
তবে, চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশুনার শুরুতেই থামতে হয় তাঁকে। দেশ স্বাধীনের লড়াইয়ে নামেন অস্ত্র হাতে। স্বাধীনতার পর আবার ফেরেন মেডিকেল কলেজে। এমবিবিএস পাস করেন ১৯৭৬ সালে। এরপর যোগ দেন সরকারি চাকরিতে।
তরুণ চিকিৎসক হিসেবে চার বছর চাকরি করেন। এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে।
১৯৮৩ সালে দেশে ফেরেন ডাঃ প্রাণগোপাল। কাজ শুরু করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে। এরপর তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন। স্বীকৃতি হিসেবে দায়িত্ব পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে। দুই মেয়াদে এই দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ২০১২ সালে চিকিৎসাবিদ্যায় স্বাধীনতা পুরস্কার পান প্রাণ গোপাল দত্ত ।
চিকিৎসক হিসবে মানুষের সেবা করেছেন, এবার সেবা করার পালা জনপ্রতিনিধি হিসেবে। প্রাণ গোপাল দত্ত জানালেন, সংসদ সদস্য হলেও চিকিৎকের পেশা ছাড়বেন না। রোগী দেখবেন আগের মতোই।
রাজনীতি ও চিকিৎসা পেশা চালিয়ে যেতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা ডা. বিধান চন্দ্র রায়কে অনুসরণ করছেন তিনি। তাঁর ভাষায়, ৮০ বছর বয়সে ডা. বিধান রায় মারা যান। সেদিনও সন্ধ্যার পরে ১৫টা রোগী দেখে ঘুমাতে গিয়েছিলেন তিনি। প্রাণগোপালও চান মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যেতে।