নুহাশপল্লীতে হচ্ছে হুমায়ূন স্মৃতি জাদুঘর
সাদাকালো নিউজ
নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিরক্ষার্থে তারই হাতে গড়া নুহাশপল্লীতে স্থাপিত হচ্ছে জাদুঘর। জনপ্রিয় এ সাহিত্যিকের মৃত্যুবার্ষিকীর প্রাক্কলে কথা হয় তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের সঙ্গে। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘হুমায়ূন আহমেদের নামে নুহাশপল্লীতে একটা জাদুঘর স্থাপন করার কাজ চলছে। পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়ন সম্পন্ন হয়েছে। জাদুঘরে কী কী রাখা হবে, সেসব জিনিসপত্র অনেকটাই গোছানো হয়েছে। বাকিগুলো সংগ্রহ চলছে।’ তিনি আরও জানান, ‘খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।’ জাদুঘরটির নাম কী হবে?Ñ এ প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে হুমায়ূনপত্নী বলেন, ‘নামটি এখনও ঠিক হয়নি।’ জানা যায়, প্রিয় এই লেখকের লেখা বইসহ তার ব্যবহার করা জিনিসপত্র দিয়ে সাজানো হবে এ স্মৃতি জাদুঘরটি।
এবার আষাঢ়ের শেষ সপ্তাহের এক বাদলভেজা দিনে গিয়েছিলাম প্রিয় এই লেখকের স্মৃতিঘেরা আঙিনায়। প্রবেশ ফটকের সামনে দাঁড়াতেই দেহ-মনে অন্যরকম একটা অনুভূতির ঢেউ খেলে গেল। প্রবেশপথের দুই ধারে সারি সারি হরেকরকমের লোকজ পণ্যের দোকান। বাইরে থেকেই দেখা যাচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের প্রতিকৃতিÑ যেন হাতছানি দিচ্ছে। ২০০ টাকা শুভেচ্ছা মূল্য দিয়ে প্রবেশ করলাম। পুব দিকে চোখ ফেরাতে চোখে পড়ল মা-ছেলের ভাস্কর্য। তালবৃক্ষের পাতার আড়লে থাকা সাদা এ ভাস্কর্যটি বেশ আকর্ষণীয়। এখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে খানিকটা সময় লাগল। কেননা ছবি তোলার জন্য অপেক্ষা করছে আরও দর্শনার্থী। এর মধ্যে চোখে পড়ল শিশু-কিশোররা দৌড়ে যাচ্ছে সুইমিংপুলের দিকে। এর পেছনের দিকটা সবুজে ঘেরা। স্বচ্ছ নীল জলের মধ্যে কেউ কেউ সাঁতরেও নিচ্ছে। দর্শনার্থীরা ভিড় করে আছেন আবসিক এলাকার সামনে। এই পল্লীতে এলে লেখক এখানেই বিশ্রাম ও রাত যাপন করতেন। তাই এই গৃহের মধ্যে প্রবেশ করার ইচ্ছা জানাচ্ছেন অনেক দর্শনার্থী। তাদের দাবি লেখকের ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখবে।
বিস্তীর্ণ মাঠ। মাঝখানে দাবার গুটির প্রতিকৃতি, টি-হাউসসহ কত কিছু! পূর্বপাশের প্রাচীর ঘেঁষে আছে দৃষ্টিন্দন ‘বৃষ্টিবিলাস’ নামের ঘর। বাদল দিনে টিনের চাল গড়িয়ে বৃষ্টির মধুর ছন্দ শোনার উপযুক্ত স্থান বটে।
বড় বড় বৃক্ষের গোড়া সানবাঁধানো। সেখানে বসে কেউ কেউ ঝিরিয়ে নিচ্ছেন। সবুজ মাঠে গরু চরছে। এর মাঝখানে একটি বড় গাছের ওপর ছোট ছোট ঘর। এক ঘর থেকে আরেকটিতে যাওয়ার সিঁড়ি রয়েছে। দর্শানার্থীরা এর ওপরে উঠে ছবি তুলছে; যে কারণে হয়তো সিঁড়ি ভেঙে গেছে। আর কিছুদিন গেলে হারিয়ে যাবে হুমায়ূন আহমেদের হাতের ছোঁয়ায় ধন্য কবুতরের খোঁপের মতো এ ঘর দুটি। মাঠ পেরিয়ে দেখা মিলল বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ ঔষধি, মসলাজাতীয়, ফলদ ও বনজ বৃক্ষের বাগান। এর গায়ে সেঁটে দেওয়া আছে পরিচিতি ফলক, যা দেখে সহজেই চেনা হলো গাছের নাম।
আর একটু সামনে এগোতেই দেখা হলো রাক্ষসের সঙ্গে। একটু দূরেই দৃষ্টিনন্দন মৎস্যকন্যাকে দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। পাখপাখালির ডাকে মুখরিত ছায়া ও মায়াঘেরা এ আঙিনা। প্রশস্ত জায়গাতে রয়েছে কুমিরসহ নানান পশুর ভাস্কর্য।
উঁচু-নিচু মেঠোপথ পেরিয়ে চোখ জুড়ানো বিশাল সেই দীঘি। এ দীঘির নাম লীলাবতী। ঘাটে অবশ্য এখন শ্যাওলা জমে আছে। পাড় ধরে পুবে গেলে ভয় পেতে পারেন। কেননা এখানে রয়েছে ভূতবিলাস। এর পাশে রয়েছে নড়বড়ে কাঠের সাঁকো। দীঘির এপাশ থেকে ওপাশে যাওয়া যায়। তবে এটি আপাতত বন্ধ।
পুরো প্রাঙ্গণের দৃশ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে হতে পেরিয়ে যাবে একটা দিন। মনে হবে এখানেই হয়তো ঘুরে বেড়াচ্ছে নন্দিত এই সাহিত্যিকের তৈরি করা কল্পনার চরিত্রগুলো। প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের অনুকীর্তির সঙ্গে শিশু-কিশোরেরা আনন্দে মেতে আছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমের কোণায় রয়েছে প্রিয় সাহিত্যিকের কবর। গাঢ় সবুজ পাতায় ঘেরা লিচুগাছে বসে পাখিরা কিচিরমিচির শোরগোলে মাতিয়ে রাখছে। পাঠকের কল্পনার জগৎ তৈরি করা প্রিয় লেখকের সমাধিটি কাচ দিয়ে ঘেরা রয়েছে। এর সামনে পাঠকরা দাঁড়িয়ে আছেন নীরস বদনে।
ভ্রমণকারীদের জন্য এ পল্লীর ব্যবস্থাপনায় রয়েছে খাবারের আয়োজন। দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকেই উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন পল্লীর ভেতরের খাবারের মূল্য জেনে। পল্লীর বাইরে মাটির চুলায় রান্না করা খাবারের মূল্যও সাশ্রয়ী। সেসব কথাও দর্শনার্থীরা শুনিয়ে দিলেন। এ পল্লী ঘিরে স্থানীয়দের রুজি-রোজগারের পথ তৈরি হয়েছে, এটাও উল্লেখ করলেন তারা। এর পরও সবুজ নিসর্গের চাদরের ঘেরা এ আঙিনায় ঘুরে এলে মনটা ভালো হবে। কাটবে আনন্দঘন কিছু মুহূর্ত। নানান রকম জিনিস দিয়ে সাজানো রয়েছে। সব বয়সী মানুষের বিনোদনের উপরকণ দিয়ে গড়া উপযুক্ত স্থান। শিক্ষারও নানান অনুসঙ্গ রয়েছে এখানে। গাজীপুর থেকে বাসযোগে হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। এরপর টমটমসহ আরও বিভিন্ন ধরনের বাহন যোগে যাওয়া যাবে নুহাশপল্লীর পিরুজালি গ্রামে।