শরীরে শক্তি যোগায় খেজুর
সাদাকালো নিউজ
মহান আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি খেজুর। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অসংখ্য স্থানে খেজুরের আলোচনা এসেছে। সালমান ইবনে আমির (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—‘তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে, খেজুর না হলে পানি দিয়ে; নিশ্চয় পানি পবিত্র‘। (আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও দারেমি; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬২, পৃষ্ঠা: ১৩১-১৩২)
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ঈমানদার ব্যক্তির জন্য খেজুর দিয়ে সেহরি খাওয়া কতোই না উত্তম! (আবু দাউদ: ২৩৪৫)
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম ফল খেজুর। প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে প্রিয়নবী (সা.) এই মহাগুণ সমৃদ্ধ ফল খেজুর খেতে উৎসাহিত করেছেন। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞান খেজুরের খাদ্যগুণ সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছে। রমজান মাসে রোজার কারণে অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকা হয় বলে দেহে প্রচুর গ্লুকোজের দরকার হয়। খেজুরে গ্লুকোজ থাকায় এ ঘাটতি পূরণ হয়। হৃদরোগীদের জন্যও খেজুর বেশ উপকারি। উচ্চমাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাটসম্পন্ন খেজুর জ্বর, মূত্রথলির ইনফেকশন, যৌনরোগ, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে বেশ কার্যকরি। খেজুর দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, পক্ষঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য উপকারি। এ ছাড়া ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যানসার রোধ করে। খেজুরের রয়েছে আরও অসংখ্যা উপকারিতা।
সংস্কৃত খর্জুর থেকে বাংলা খেজুর। যার বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিক্স ড্যাকটিলিফেরা। তালজাতীয় শাখাবিহীন খেজুর গাছ প্রধানতঃ মরু এলাকায় ভাল জন্মে। পূর্ব ও উত্তর আফ্রিকা দেশগুলোতে খেজুরের চাষ প্রচলন বেশি। অনেকের মতে ইরাক অথবা মিসর খেজুর ফলের আদি স্থান। প্রাচীনকাল থেকে খেজুর ফলের বাগান সৃষ্টি করা এবং তা থেকে প্রাপ্ত খাদ্য ও ফলের উৎস হিসেবে খেজুর মানুষের জীবন ধারণের অন্যতম অবলম্বন ছিল।
আরব দেশগুলোর মরুভূমি এলাকায় যেখানে অন্য কোনো গাছপালা জন্মানো সহজ হয় না সেখানে খেজুর বাগান সৃষ্টি করে মরুদ্যান সৃষ্টি করা হতো। খেজুর যেসব দেশে বেশি চাষ হয় তার মধ্যে মিসর, সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, আলজেরিয়া, সুদান, ওমান, লিবিয়া ও তিউনেশিয়া অন্যতম। চীন, ভারত, বাংলাদেশ ও আমেরিকার কিছু অংশে সফলভাবে খেজুর চাষ করা হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে খেজুর গাছ “ট্রি অফ লাইফ” বা জীবন বৃক্ষ নামে পরিচিত। খেজুর উৎপাদনে বিশ্বে সৌদি আরবের অবস্থান তৃতীয়। সমগ্র সৌদি- আরবে ৩৬০ প্রজাতির প্রায় আড়াই কোটি খেজুর গাছ আছে। আকারে ও স্বাদে খেজুর অনেক প্রকারের হয়। উল্লেখযোগ্য হলো—পাঠান-আল মদিনা, মাসকানি, বার্হী, শাহীবি, খালস, আজওয়া, আনবারা, সাগি, সাফাওয়ি, ওয়ান্নাহ, সেফরি, খুদরি বেরহি, সামরান, জাহেদি, মরিয়ম, আনবারাহ, আসমাউলহাসনা, ইয়াবনি ইত্যাদি।
চারটি পর্যায়ে খেজুর পাকানো বা সংরক্ষণ করা হয়। আরবিতে সেগুলো কিমরি (কাঁচা), খালাল (পূর্ণাঙ্গ), রুতাব (পাকা—নরম) এবং তুমুর (পাকা—রোদে শুকানো)। খেজুর সাফাওয়ি নরম হয়ে থাকে। রং গাঢ় বাদামি। আকারে লম্বাটে। খেতে মাঝারি মিষ্টি। মদিনার বিখ্যাত খেজুর আমবার। এটি কম মিষ্টি। আর মরিয়ম নামের খেজুর লালচে বাদামি রঙের হয়। আকারে হয় এক-দেড় ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা।
বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও উৎকৃষ্টতম খেজুর হলো আজওয়া খেজুর। এর মধ্যেও আবার অনেক পদ আছে। সৌদি আরব থেকে আসে এই আজওয়া খেজুর। পবিত্র হাদিস শরিফে এই ফলটিকে জান্নাতের ফল আখ্যায়িত করা হয়েছে। রাসুল (সা.)-এর প্রিয় ফল ছিল খেজুর। এর উপকারিতা অপরিসীম। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালবেলা সাতটি আজওয়া (উৎকৃষ্ট) খেজুর খাবে, সেদিন কোনো বিষ ও জাদু তার ক্ষতি করবে না। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৪৫)