লোকসানি টেলিটকের উন্নয়নে দুই হাজার ২০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ
সাদাকালো নিউজ ডেস্ক:
২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই লোকসানের বৃত্তে আটকে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের উন্নয়নে দুই হাজার ২০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এই টাকায় গ্রামে ফোরজি সেবা সম্প্রসারণ এবং সারাদেশ ফাইভজি সেবা চালুর অবকাঠামো নির্মাণে খরচ করবে প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও ৫জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্কের আধুনিকায়ন’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
একনেক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
এসময় লোকসানি টেলিটকে কেন বারবার সরকার জনগণের রাজস্বের টাকা বরাদ্দ দেয়- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হওয়ায় দেশের প্রতিটি নাগরিকের সুবিধার বিষয় মাথায় রেখে আমাদের পরিকল্পনা নিতে হয়। যেহেতু মোবাইল অপারেটরদের প্রায় সবগুলোই বেসরকারি খাতে, সেখানে মাত্র একটি সরকারি। টেলিটকে কলরেট অনেক কম, এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে তারা সেবা দিয়ে থাকে। একারনে জনস্বার্থে লোকসান দিয়ে হলেও সরকার এটা পরিচালনা করছে। বেসরকারি খাতকে আমরা নীতি সহায়তা দেব, ব্যবসা করার সুযোগ করে দেব। কিন্তু সবকিছু বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে পারি না। তাই গ্রামপর্যায়ে টেলিটকের ৫জি সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক সুবিধা না থাকায় ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ১৭ বছরে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনেছে। আর গত চার বছরেই টেলিটক লোকসান করেছে ৯৯৩ কোটি টাকা। দেশের অন্যান্য অপারেটরদের গ্রাহক সংখ্যা যেখানে প্রায় চার থেকে আট কোটি, সেখানে টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা ৫০ লাখের কিছু বেশি।
এ অবস্থাতেও সরকারের নতুন বরাদ্দকে যুক্তিযুক্ত বলে দাবি করছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে গরে তোলা হয় টেলিটককে। টেলিটককে এখন যেসব বেসরকারি মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে প্রতিযগিতা করতে হচ্ছে, তাদের একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ রয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। অথচ দুই বছর আগে আমি যখন দায়িত্ব নেই তখন টেলিটকে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ পেয়েছি মাত্র ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এত অল্প পুঁজিতে টেলিটক কিভাবে প্রতিযোগিতা করবে?’
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এ অবস্থায় টেলিটককে ব্যবসা করতে হলে নেটওয়ার্ক বাড়াতে হবে, অবকাঠামো উন্নত করতে হবে। যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাতে টেলিটক ঘুরে দাঁড়াবে, তবে ব্যবসায় সফল হতে হলে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। তাছাড়া আরেকটি ভুল ধারণা হচ্ছে, সরকার টেলিটকে টাকা ঢালছে। কিন্তু বিষয়টি তা নয়। ২ হাজার ২০৪ কোটি টাকার মধ্যে ৮০ শতাংশই সরকারের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নিচ্ছে টেলিটক। যা পরে ফেরত দেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন :
