বর্ষায় যেভাবে নিজেকে সুস্থ রাখবেন!
সাদাকালো নিউজ
বর্ষার ভরা মৌসুম চলছে। প্রকৃতিপ্রেমী হিসেবে বর্ষা ঋতু সবারই পছন্দ। বর্ষাকালে বৃষ্টির ধারাপাতে প্রফুল্লিত হয়ে ওঠে মন। অতিবর্ষণ কিছু সমস্যার সৃষ্টি করলেও বর্ষাকে যেন সবাই উপভোগ করেন। তবে চারপাশে স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার সঙ্গে রয়েছে ডেঙ্গু আর করোনার প্রাদুর্ভাব। ফলে খুবই সচেতন থাকার সময়।
চিকিৎসকেরা এই সময়টাতে খাবারের ব্যাপারে বেশি সতর্ক হতে বলছেন। কারণ এই সময়ই সব চেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে জীবাণুরা। আর সুযোগ পেলেই বাঁধিয়ে দেয় জ্বর, সর্দি, কাশি, অ্যালার্জি, স্কিন ইনফেকশন, হজমের সমস্যা, পেটের সমস্যা। তাই বর্ষার ডায়েট প্লান ভেবে চিন্তা করে নির্ধারণ করতে হবে।
বর্ষার সময় যত দূর সম্ভব বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। বর্ষায় কৃত্রিম আক্রমণও বেশি হয়। তাই এখন এড়িয়ে চলুন কাঁচা সবজি, শসা, পেঁয়াজ, টমেটো। এর থেকে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, আমাশা, বদহজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঘর থেকে বের হলেই বিশুদ্ধ পানির বোতল সঙ্গে রাখুন। বর্ষাকালে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। যতদূর সম্ভব পানি ফুটিয়ে পান করুন। খাবারের আগে অবশ্যই হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। হাত ধোয়ার একান্ত উপায় না থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
রাস্তার ধারের কাটা ফল, ফলের রস, আখের রস এড়িয়ে চলুন। ডায়রিয়া বা ডিসেন্ট্রি হলে বারেবারে ওআরএস স্যালাইন খান। সঙ্গে বাড়ির তৈরি হালকা খাবার খাওয়া যেতে পারে। ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
বর্ষাকালে প্রতিদিন মৌসুমি ফল খান। আপেল, আনারস, বেদানা, পেয়ারা খেতে পারেন। মৌসুম শেষের আমও খাওয়া যেতে পারে, তবে পরিমিত পরিমাণে। তা না হলে ওজন বৃদ্ধি, ব্রণ ও ফুসকুড়ির সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভিটামিন সি যুক্ত ফল ও সবজি খান, এতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
অসময়ের ফুলকপি, বরবটি, রাজমা, ছোলার ডাল বর্ষায় কম খান। কাঁচা সবজির সালাদের বদলে অল্প জলে ভাপিয়ে নিয়ে সবজি খান। এতে ব্যাকটেরিয়াল ও ভাইরাল ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। রান্নায় শাকসবজি ব্যবহার করার আগে কম করে আধঘণ্টা লবণলে ভিজিয়ে রেখে তারপর রান্না করুন। বর্ষায় ডেয়ারি পণ্য খাওয়া উচিত নয়। দইয়ে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে পেটে গণ্ডগোল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বর্ষায় হজম ক্ষমতা দুর্বল থাকে। তাই খাবার হজম করতে সমস্যা হয়। সেজন্য রেড মিট খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। বর্ষায় প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি করে খাওয়া প্রয়োজন। ডিম, ডাল, সয়াবিন, বাদামের মতো ভরপুর প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া প্রয়োজন। এতে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। কাজু, কিশমিশ, পেস্তা বাদাম, কাঠ বাদাম, খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। এসব খাবার রোগের সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে।
সুস্থ থাকতে কাঁচা লবণ, অতিরিক্ত নোনতা খাবার- যেমন, বাদাম, চিপস, ডালমুট এড়িয়ে চলুন। এতে শরীরে ওয়াটার রিটেনশন থেকে ব্লোটিংয়ের মতো সমস্যা কম হবে। ফাইবার যুক্ত ওটস, বার্লি, ব্রাউন রাইস রাখুন রোজকার ডায়েটে। তাতে পেটের সমস্যা কম দেখা দেবে। দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অল্প রসুন ব্যবহার করুন রান্নায়। চায়ে অল্প আদা দিয়ে খান। পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য টক দই, ইয়োগার্ট নিয়মিত খান। প্রতিদিনের খাবার শেষে করলা সেদ্ধ, নিমপাতা, মেথি খান।
এছাড়া বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা দেয়। এ সময় ডেঙ্গু যেন না ছড়ায় সে জন্য বাসার আশপাশে যেসব জলাধার বা পানি জমে এমন পাত্র সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। ঘরের দেয়ালে যেন পানি পড়ে ফাঙ্গাস না জন্মায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঘর যাতে স্যাঁতসেঁতে হয়ে না থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ এ থেকে রোগবালাই হয় বেশি। বর্ষায় পোকামাকড়, সাপ ও জোঁকের উৎপাত বেশি হয়, সে কারণে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
মন্তব্য করুন :
