সাংবাদিক নাদিমকাণ্ডের মূলহোতা বাবু চেয়ারম্যানের বেপরোয়া জীবন!
সাদাকালো নিউজ
‘সংবাদ প্রকাশের জেরে’ জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় সাংবাদিক গোলাম রব্বানীকে শেষ করে দেয়ার ঘটনার পর থেকেই আলোচনায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। এই চেয়ারম্যানেই ঘটনার মূলহোতা বলে নাদিমের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে আছেন এই চেয়ারম্যান।
জানা গেছে, বাবু চেয়ারম্যান একসময় সাধুপাড়া ইউনিয়নের নিজ গ্রামে একটি মুদির দোকান চালিয়ে দিনাতিপাত করতো। এরপর চাচাতো ভাই ইঞ্জিনিয়ার হারুনের সহযোগিতায় ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়ে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার নির্মাণের কাজ শুরু করে। ধীরে ধীরে দিন পাল্টে যায় তার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে জাতীয় ছাত্রসমাজের প্রথম সারির কর্মী ছিলেন বাবু। পরবর্তীতে ভোল পাল্টে রাজনীতি ছেড়ে নিরপেক্ষতার ভান ধরে। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ভিড়েন তিনি। দলে ভিড়েই একি বছর ইউপি নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। শুরুতে ভোটে না জিতলেও ২০১৪ সালে সাধুপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। এরপর জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পদেও জায়গা পান।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকায় খুব সহজেই ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট পায় বাবু। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই নিজের অবস্থানও পাকাপোক্ত করে ফেলেন তিনি। এরপর অর্থ আর ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে চলতে শুরু করেন। পুলিশের সাবেক এক ডিআইজির চাচাতো ভাই হিসেবে সব জায়গায় শক্তি প্রদর্শন করতে থাকেন। একটা সময় হয়ে যান সাধুরপাড়া ইউনিয়নের অঘোষিত সম্রাট।
২০১৪ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর আর কোনো সম্মেলন হয়নি। তাই পদে থেকে ২০১৬ এবং ২০২১ সালে নৌকার মাঝি হয়ে নির্বাচনে জয় লাভ করেন মাহমুদুল আলম বাবু। একদিকে দুই বারের নৌকার চেয়ারম্যান, অন্যদিকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৯ বছরের সাধারণ সম্পাদক, বাবু আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন।
মাহমুদুল আলম বাবুর ছেলে রিফাতও তার বাবার মতোই ক্ষমতার দম্ভে বেপরোয়া হয়ে উঠে। তবে নারী রোভী বাবুর চরিত্র প্রকাশ্যে আসে তখন, যখন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা আক্তার দৃশ্যপটে আসে। জানা যায়, সাবিনাকে পরপর দুই বার বিয়ে করে বাবু। দ্বিতীয় বিয়ের পর সাবিনার কোলজুড়ে যখন বাচ্চা আসে তখন তাকে পুনরায় অস্বীকার করে বাবু। যখন সাবিনা তার অধিকার ফিরে পেতে চায়, ঠিক সে সময় সংবাদকর্মী নাদিম বাবুর বিরুদ্ধে একের পর প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকে। এরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সে।
বারবার সংবাদ প্রকাশ করায় নাদিম ও অন্যদের নামে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মোকদ্দমা দায়ের করেন বাবু চেয়ারম্যান। কিন্তু মোকদ্দমার মেরিট না থাকায় তা খারিজ করে দেন ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক। আর এই ঘটনার চার ঘন্টার মধ্যেই সাংবাদিক নাদিমের ওপর চড়াও হওয়ার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের ধারণা, বাবু হয়তো জানতো সাংবাদিক নাদিমকে কোনোভাবেই আটকানো যাবে না। তাই আগে থেকেই নাদিমকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে সে। আর সেই পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক নাদিমকে শেষ করে দেয় তার বাহিনীর সদস্যরা। আর এই ঘটনায় বাবু নিজে উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দেয় বলে জানিয়েছে নাদিমের সহকর্মীরা।
১৫ই জুন ময়মনসিংহের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ছাড়েন নাদিম। আর এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। অবশ্য তার আগেই ওই রাতের একটি সিসিটিভ ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পরে। পরেপর পুলিশের জালে ধরা পরে ৬ জন। কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায় চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু।