মিষ্টি কুমড়া চাষে কৃষকের বাড়তি আয়
সাদাকালো নিউজ
ফসলি জমির পাশে যুগ যুগ ধরে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত জমিগুলোতে অতিরিক্ত আয়ের আশায় মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে কৃষক পরিবার। এসব জমিতে ফসল ভালো হওয়ায় স্বাবলম্বী হয়েছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার অনেক কৃষক পরিবার।
ঐতিহাসিক বাগধার বিলসহ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে ওই অঞ্চলের অসংখ্য নিম্ন আয়ের পরিবারের। এ ছাড়া উপজেলার মোল্লাপাড়া, বারোপাইকা, দুশমি, আস্কর, জলির পাড়, কোদাল ধোয়া, বাহাদুরপুর, বাটরা, ফেনাবাড়ি, রাজিহার, বাশাইল, গৈলাসহ বিভিন্ন এলাকার পতিত জমিতে কুমড়ার চাষ হচ্ছে।
আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামেই কমবেশি মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়ে থাকে। এ অঞ্চলের মাটি উর্বর হওয়ায় ইরি-বোরো ধান অবাদের পাশাপাশি ধানক্ষেতের আইলে সাথি ফসল হিসেবে ও পতিত উঁচু জমিগুলো ফাঁকা না রেখে মিষ্টি কুমড়া চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। ইরি-বোরো জমিতে সেচ সার দেওয়ার কারণে জমির আইলের মাটিও বেশ উর্বর থাকে। ফলে সেখানে মিষ্টি কুমড়া চাষ করলে ফলন বেশি পাওয়া যায়।
উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের মিষ্টি কুমড়া চাষি কৃষাণি অনিতা ভদ্র বলেন, বিগত ১০ বছর আমি ইরি-বোরো ধানক্ষেতের আইলে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করছি। গত বছর কুমড়া চাষ করে ক্ষেতে বসেই আমি প্রায় ৫০ হাজার টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছি।
তিনি আরও বলেন, বাড়তি আয়ের ওই টাকা আমি আমার ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার পেছনে খরচ করেছি। এ বছরও আমার ক্ষেতে ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর আশা করছি মিষ্টি কুমড়া থেকে আমার আরও বেশি আয় হবে। মিষ্টি কুমড়া চাষি কৃষাণি আরতী হালদার বলেন, আমরা আমাদের উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া জমিতে বসেই বিক্রি করতে পারছি। এতে পরিবহনের পেছনে বাড়তি খরচ করতে হয় না।
এদিকে একই গ্রামের মিষ্টি কুমড়া চাষি কৃষক মিনাল পান্ডে, অনিল বাড়ৈ, সাধন মৃধা, শম্পা রানী, রমণী বকুলা, পরিমল মণ্ডল, বিরেন ভদ্র, আরতী হালদার জানান, নিজেদের পতিত জমিতে কুমড়া চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
উপজেলার বাহাদুরপুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়াসহ নানা জাতের মিষ্টি কুমড়া ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি কুমড়াই ৩ থেকে ৮ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। এখানকার উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের কাঁচাবাজারের পাইকারি আড়তগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।
মিষ্টি কুমড়া চাষিরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর তাদের ক্ষেতে কুমড়ার ফলন বেশ ভালো হয়েছে। অধিক ফলনের পাশাপাশি তাদের ফলানো মিষ্টি কুমড়ার বাজারে বেশ ভালো দাম যাচ্ছে। এটি চাষে খরচ কম হয়, কীটনাশকেরও ব্যবহার অনেক কম। ফলে অল্প খরচে বেশি লাভ পাওয়ায় এলাকার কৃষক পরিবারগুলোর মধ্যে মিষ্টি কুমড়া চাষের দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। কুমড়া চাষে সরকারি সহায়তা পেলে আরও বেশি উৎসাহিত হবেন বলে জানান কৃষকেরা।
বাটরা গ্রামের রমণী সরকার বলেন, নিজেদের উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করতে আমাদের কোনো চিন্তা করতে হয় না। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে জমি থেকেই আমাদের কুমড়া কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে দাম কিছুটা কম পেলেও সময় এবং শ্রম বেঁচে যাওয়ায় আমরা বেশ লাভবানই হাচ্ছি। এ ছাড়া পরিবারের চাহিদা মেটাতে উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় গৃহিণীরা ২-৪টি করে মিষ্টি কুমড়ার গাছ লাগান। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে কিছু কুমড়া তারা বিক্রির জন্য এলাকার হাট বাজারে পাঠান।
আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, চলতি বছর এ উপজেলার ২৫ হেক্টর জমিতে বারোমাসি, বারি, মনিকাসহ স্থানীয় জাতের মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকেরা ফলনও বেশ ভালো পেয়েছেন। এখানকার উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া আকারে বেশ বড় এবং মিষ্টি হয়।