মেয়েটিকে পাঠানো হলো পাকিস্তানে, ছেলেটি এখন ভারতের হাজতে
সাদাকালো নিউজ
ছেলেটির বাড়ি ভারতে, মেয়েটির পাকিস্তানে। তাঁদের পরিচয় অনলাইনে লুডু খেলতে গিয়ে। এরপর সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। বিয়েও করেন তাঁরা। সম্পর্কে তারা স্বামী-স্ত্রী হলেও জাতীয়তা ভিন্ন। এটাই ছিলো তাদের অপরাধ।
ভারতীয় ছেলেটির নাম মুলায়ম সিং যাদব। বয়স ২১ বছর। একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করতেন তিনি। আর পাকিস্তানি মেয়েটির নাম ইকরা জেওয়ানি। বয়স ১৯ বছর। পাকিস্তানের হায়দরাবাদে পড়াশোনা করতেন তিনি।
মুলায়ম-ইকরার প্রেমের গল্প শুরু হয় ২০২০ সালে। যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে লকডাউন চলছিল, তখন অনলাইনে লুডু খেলতে গিয়ে পরিচয় হয় তাদের। প্রেমে পড়েন দুজনে। বিয়ে করতে চান। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভারত-পাকিস্তানের সীমান্ত।
অবশেষে গত বছরের সেপ্টেম্বরে নেপালে দেখা করেন মুলায়ম-ইকরা। সেখানেই বিয়ে করেন তাঁরা। এরপর ইকরা স্বামীর সঙ্গে ভারতের কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে চলে আসেন। পরিচয় লুকাতে স্ত্রীর জন্য ভুয়া আধার কার্ড বানিয়েছিলেন মুলায়ম। সেখানেই দুজন বসবাস করছিলেন। বেশ সুখেই কাটছিল তাদের সময়। কিন্তু বেশি দিন সেই সুখ স্থায়ী হয়নি।
গেল জানুয়ারিতে বেঙ্গালুরু পুলিশ অভিযান চালায় মুলায়ম-ইকরার বাড়িতে। আটক করা হয় দুজনকেই। অভিযোগ, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ইকরা ভারতে এসেছেন এবং বসবাস করছেন। আর মুলায়ম অবৈধ পন্থায় ভারতে আসা একজন বিদেশিকে আশ্রয় দিয়েছেন। ভুয়া কাগজপত্র তৈরিতে সহায়তা করেছেন।
পুলিশের ভাষ্য, যাদব প্রতিদিন কাজে যেত, আর তার স্ত্রী বাড়িতেই থাকতো। তবে মাঝেমধ্যে পাকিস্তানে থাকা মায়ের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলতেন ইকরা। সেখান থেকেই বিষয়টি নজরে আসে তাদের।
এ ঘটনার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেঙ্গালুরু পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে এটা নিছক প্রেমের ঘটনা। প্রেমের টানে একসঙ্গে থাকার জন্য তাঁরা এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন। তবে জালিয়াতি করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরির জন্য মুলায়মকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। এ ঘটনায় আরও তদন্ত করা হচ্ছে।
বর্তমানে তাদের প্রেমের পরিণতি হাজতে। গত সপ্তাহে স্ত্রী ইকরাকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আর মুলায়ম আছেন বেঙ্গালুরুর হাজতে। মুলায়মের পরিবারের সদস্যরা থাকেন উত্তর প্রদেশে। তাঁদের ভাষ্য, মুলায়ম আর ইকরার সম্পর্কটা ছিল প্রেমের। কিন্তু ভারত আর পাকিস্তানের বৈরিতা তাঁদের সুখে থাকতে দিল না।
মুলায়মের ভাই জিতলাল বলেন, ‘আমরা ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কটা বুঝতে পারছি। কিন্তু তারা প্রেমের কারণেই এমনটা করেছে। এখানে আর অন্য কিছু ছিলো না।’ স্বজনদের আশা, উভয় দেশের সরকার তাদের পুনরায় একত্রিত করতে সহায়তা করবে।