৭১ টি দেশকে পেছনে ফেলে বিশ্ব জয় করলেন হাফেজ কারি আবদুল হক
সাদাকালো নিউজ
মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশি হাফেজদের আলাদা গুরুত্ব আছে। আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি হাফেজরা বরাবরই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। করেছে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাকে সম্মানিত। তাদের অনন্য অবদানে প্রায়ই বিশ্বমিডিয়ায় শিরোনাম হচ্ছে সতেরো কোটি মানুষের ‘বাংলাদেশ’।
কাতার, কুয়েত, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, মালয়েশিয়া, ভারত, বাহরাইনসহ বিভিন্ন দেশে আয়োজিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হচ্ছে বাংলাদেশি হাফেজরা।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই যে বাংলাদেশি হাফেজদের বিজয়ের ধারা, এটা কিন্তু আগে ছিল না। আরো সহজ কথায় বললে গত ২৫-৩০ বছর আগে এ দেশের হাফেজদের এত গুরুত্ব বা সুনাম ছিল না। বাংলাদেশের হিফজ মাদরাসায় যিনি ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন, বা আন্তর্জাতিক মানের হাফেজ তৈরির সূচনা করেছেন, তিনি হলেন শায়েখ হাফেজ আবদুল হক।
শায়েখ আবদুল হকই এমন হাফেজ, যিনি বাংলাদেশ থেকে সর্বপ্রথম হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় ৭১ টি দেশকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অর্জন করে বিশ্ব জয় করেন।
শায়েখ আব্দুল হক ইলমে কিরাত ও ইলমে তাজবিদসহ বিশুদ্ধ তিলাওয়াতে পারদর্শি একজন ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন মহল থেকে রইসুল হুফফাজ উপাধিতে ভূষিত একজন কোরআনের বাহক তিনি।
সারা দেশে তার সুনাম সুখ্যাতি ছড়িয়ে আছে। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি পবিত্র কোরআনের খিদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। প্রায় ৫০ বছরের শিক্ষকতায় তার সাফল্যের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। দেশ বিদেশের খ্যাতিমান অনেক কারীরাও তার ছাত্র।
তার কৃতিছাত্রদের তালিকাও সুবিশাল। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, বিভিন্ন অঙ্গনে আব্দুল হকের হাজার হাজার ছাত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কুরআনের খেদমতে।
আশির দশক থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের যত হাফেজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে, তাদের বেশিরভাগেরই সফলতার মূলে রয়েছেন শায়েখ আবদুল হক।
১৯৮২ সালে লিবিয়ায় পূর্ণ ৩০ পারা হিফজ প্রতিযোগিতায় শায়েখ আবদুল হক ৭১ টি দেশকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অর্জন করেন। একই প্রতিযোগিতার ২০ গ্রুপে তার ছাত্র অর্জন করেন চতুর্থ স্থান।
১৯৯০ সালে ইরানে আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় রাষ্ট্রীয় সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৯৩ সালে সৌদি আরবে কুরআন প্রতিযোগিতায় কৃতিত্বের কারণে শায়েখ আবদুল হককে সৌদি সরকার পবিত্র কাবাগৃহে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছিল। শায়েখ আবদুল হক দুই বছর ইমামতি এবং শিক্ষকতা করেছেন সৌদি আরবে।
শুধু তাই নয়,জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রায়ই তাকে বিচারক হিসেবে ডাকা হয়।
কাতার সরকারের পক্ষ থেকে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় সে দেশে শিক্ষকতা ও মসজিদে খেদমতের জন্য। কিন্তু, তিনি নিজের দেশেই কুরআন শিক্ষা দেওয়াকে প্রাধান্য দিয়েছেন৷
বাংলাদেশে নূরানি মাদরাসার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অনেক আগে থেকে চলে আসলেও হিফজ মাদরাসার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আনুষ্ঠানিকতা লাভ করে শায়েখ আবদুল হকের মাধ্যমে। তার প্রতিষ্ঠান হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হিফজ শিক্ষকদের সারাদেশেই ভিন্ন কদর রয়েছে। চাকরির ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানের সনদধারী শিক্ষকদের সব হিফজ মাদরাসায়ই গুরুত্ব দেওয়া হয়। হিফজ শিক্ষকদের যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণের কারণেই মূলত বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের অসংখ্য হাফেজ তৈরি হচ্ছে।
হাফেজ কারি আবদুল হক বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিশ্ব জয় করা হাফেজের সংখ্যা এখন কম নয়। এইসব হাফেজের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম-সুখ্যাতি বাড়ছে। লাল সবুজের পতাকা সম্মানিত হচ্ছে। বিশ্বজয়ী হাফেজদের সরকারের পক্ষ থেকে সম্মাননা দেওয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে এক ধরনের উদাসীনতা লক্ষ করা যায়। অথচ, দেশের মাদরাসাগুলোর প্রতি একটু যত্ন নিলে বা একটু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিলে বাংলাদেশি হাফেজদের মানসম্মান এবং সুনাম-সুখ্যাতি অনন্য উচ্চতায় পৌছে যাবে বলে মনে করেন শায়েখ আবদুল হক।