৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকার অনিয়ম জাহাঙ্গীর আলমকে দুদকে তলব!
সাদাকালো নিউজ
দল থেকে আজীবনের জন্য বাদ পড়েছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। এই খবরের রেশ কাটতে না কাটতেই আরও একটি দুঃসংবাদ আসে তার জীবনে। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাকে ডেকেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক।
বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতসহ ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে জাহাঙ্গীরকে তলব করা হয়েছে বলে জানা গেছে। দুদকের উপ-পরিচালক মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়, ২২ মে সকাল ১০টায় জাতীয় পরিচয়পত্র এবং অভিযোগ সংশিষ্ট রেকর্ডসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দিতে হবে তাকে।
নোটিশ থেকে জানা গেছে, অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপপরিচালক মো. আলী আকবরকে টিম লিডার এবং সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমানকে সদস্য করে দুই সদস্য বিশিষ্ট টিম গঠন করে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম নির্ধারিত সময়ে বক্তব্য দিতে ব্যর্থ হলে অভিযোগ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেই বলে গণ্য করা হবে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মো. জাহাঙ্গীর আলম তার প্রায় ৩ বছরের বেশি সময়কালে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনিয়ম করেছেন। ২০২২ সালের চৌঠা সেপ্টেম্বর দুদক জাহাঙ্গীরের এই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার কথা জানায়। একি দিন অভিযোগের বিষয়ে দুদক গঠিত অনুসন্ধান টিম গাজীপুরের নগর ভবন, ব্যাংক ও পোশাক কারখানাসহ সংশ্লিষ্ট অফিসে অনুসন্ধান শুরু করে।
ওইদিন দুদকের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান আশিক অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, বিশ্ব ইজতেমার খরচের ভাউচারে অনিয়ম, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক প্রশস্তকরণের কাজে ইস্টিমেট অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন না হওয়া, অনেক সড়কে ইস্টিমেটের অতিরিক্ত সড়ক প্রশস্তকরণের নামে বাড়িঘর ভাঙা, ভাঙা বাড়িঘরের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে কি না, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে কি না ইত্যাদি বিষয় অনুসন্ধান এবং তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হবে। যদি অভিযোগ প্রমাণিতহ হয় তাহলে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযোগ পাওয়ার পর দুদকের তদন্ত কমিটির সদস্যরা গাজীপুর নগর ভবন পরিদর্শন, কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকসমূহ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং বিভিন্ন নথিপত্রও সংগ্রহ করেছেন প্রতিনিধি দল।
দুদক সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কয়টি ব্যাংকে কয়টি হিসাব, কার নামে কীভাবে পরিচালিত হয়েছে সেসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তাছাড়া গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে একটি বেসরকারি ব্যাংকে সিটি করপোরেশনের নামে জাহাঙ্গীর আলমের একক স্বাক্ষরে অ্যাকাউন্ট খুলে আড়াই কোটি টাকা দুর্নীতির তথ্যও পেয়েছে দুদক।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে ভুয়া টেন্ডার, আরএফকিউ, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রতিবছর হাট-বাজার ইজারার অর্থ যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সেদিন তার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের জেরে ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন জাহাঙ্গীর আলম। পরে মেয়র পদও হারান তিনি। সবশেষ গেল ১৫ মে জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।