৩২ বছরে ২৬ জনের সাজা কার্যকর করেছেন তিনি!
সাদাকালো নিউজ
এ পর্যন্ত ২৬ জনকে সর্বোচ্চ সাজা দেয়ার আদেশ পালন করেছেন তিনি। অন্তত হাজতের রেকর্ড তাই বলে। অবশ্য শাহজাহান ভূঁইয়ার দাবি, তিনি ৬০ জনের সাথে এই কাজটি করেছেন। বিভিন্ন মোকদ্দমায় তাঁর ৪২ বছরের সাজা হয়েছিল। তবে বিভিন্ন কারণে তার সাজার মেয়াদ কমিয়ে করা হয় ৩২ বছর। অবশেষে সেই সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে তার।
রোববার দুপুর প্রায় পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন শাহজাহান ভূঁইয়া। তিনি যাদের সর্বোচ্চ সাজা দেয়ার আদেশ পালন করেছেন তাদের মধ্যে আছেন- বঙ্গবন্ধুকে শেষ করে দেয়ার ঘটনায় জড়িত ৬ জন। জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাসেম আলী ও জেএমবির দুই সদস্য।
১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ জন্ম শাহজাহান ভূঁইয়ার। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামে জন্ম হয় তার। বাবার নাম হাসান আলী ভূঁইয়া। মা সবমেহের। এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে তিনি অবিবাহিত।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন শাহজাহান। নথি অনুসারে, ১৯৯২ সালের ৮ নভেম্বর ডাকাতির জন্য ১২ বছর এবং ১৯৯৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর অপর একটি মোকদ্দমায় ৩০ বছরের দণ্ড হয় তাঁর। এছাড়া উভয় রায়ে তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের দণ্ড হয়।
এই শাহজানের বয়স এখন ৭৩ বছর। তিনি বিয়ে করেননি। আজ তার আগের এক কারাসঙ্গীর বাড়িতে যাচ্ছেন। সেখানে আপাতত কয়েক দিন থাকবেন। মুক্তি পাওয়ার পর শাহজাহান ভূঁইয়া জানান, তার বাড়ি ঘর কিছু নেই। তাই সরকার যেন তার একটা ব্যবস্থা করে, এ দাবি তার।
শাহজাহান ভূঁইয়া মুক্তি পাওয়ার আগে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে জেলার মাহবুবুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, তাঁদের রেকর্ড অনুযায়ী দুই মোকদ্দমায় সাজাপ্রাপ্ত শাহজাহান ভূঁইয়া। এ দুটি মোকদ্দমায় ১৯৯১ সালের ১৭ মে থেকে হাজতে ছিলেন তিনি।
জেলার মাহবুবুলের তথ্যানুযায়ী, ৪২ বছরের সাজার মধ্যে রাষ্ট্রে প্রতি আদেশ পালনের জন্য দুই মাস কারা রেয়াত পেয়েছেন শাহজাহান। কারাবিধি অনুযায়ী, আচার-আচরণ এবং অন্যান্য কারণে সব মিলিয়ে ১০ বছর ৫ মাস রেয়াত পেয়েছেন। সাজা খেটেছেন ৩১ বছর ৬ মাস ২ দিন। শাহজাহানের হাতে কোনো টাকাপয়সা না থাকায় যে ১০ হাজার টাকা তাঁর দণ্ড হয়েছিল, তা কারা কর্তৃপক্ষ মিটিয়ে দিয়েছে।
হাজত থেকে মুক্তি পেয়ে কারাফটকের সামনে শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, আমার খুব ভালো লাগছে। আমার এক বোন আছে। তাকে কখনো দেখিনি। কিন্তু ফোনে কথা হয়েছে। সে আমাকে কোনো দিন দেখতেও আসেনি। তিনি আরও জানান, হাজতে তিনি যা কাজ করতেন সেটা রাষ্ট্রের হুকুমেই করতেন।