১০ দিনের ছেলেসহ ধ্বংসস্তূপের নিচে এক মায়ের ৪ দিন!
সাদাকালো নিউজ
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে হাজার হাজার নিহতের ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এতো হতাশার মাঝেও এসেছে ‘অলৌকিকভাবে’ জীবিত উদ্ধারের নানা গল্প। এটি এমনই এক গল্প।
গত ২৭ জানুয়ারি নেকলা কামুজ যখন তার দ্বিতীয় ছেলে সন্তানের জন্ম দেন, তখন তিনি তার নাম রাখেন ইয়াগিজ, যার অর্থ সাহসী। ঠিক ১০ দিন পর স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭মিনিটে নেকলা তার ছেলেকে দক্ষিণ তুরস্কের হতায়ে প্রদেশে নিজ বাড়ির ভেতরে খাওয়াচ্ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর তারা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে যান। নেকলা এবং তার পরিবার সামান্দাগ শহরে একটি আধুনিক পাঁচতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকতেন।
১০ দিন বয়সী ছেলেকে নিয়ে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিলেন নেকলা। পরে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে তাদের। প্রথম দিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নেকলা বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে ঘরের পোশাক পরা অবস্থায় আটকে ছিলেন তিনি। ঘুটঘুটে কালো ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাননি তিনি। তাই চারপাশে কী ঘটছে তা বোঝার জন্য তার অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়েছিল।
নিজের স্বস্তির জন্য, তিনি একটি কথাই আওড়াতেন যে ইয়াগিজ এখনও শ্বাস নিচ্ছে। ধুলোর কারণে, প্রথমে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়েছিল, কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সব স্থির হয়ে পড়ে। ধ্বংসস্তূপের ভেতরে উষ্ণতার মধ্যে ছিলেন তিনি।
তিনি অনুভব করেছিলেন তার শরীরের নিচে বাচ্চাদের খেলনা চাপা পড়েছে কিন্তু নিজেকে তুলে সেটা বের করে স্বস্তি পাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে তিনি ছিলেন না।
তবুও তিনি জানতেন যে তাকে ইয়াগিজের দেখাশোনা করতে হবে এবং ওইটুকু জায়গায় তাকে বুকের দুধ খাওয়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু নিজের জন্য কোনও পানি বা খাবার পাননি তিনি। হতাশায় তিনি নিজের বুকের দুধ পান করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন। নেকলা মাথার ওপরে ড্রিলের গর্জন অনুভব করেন সেইসাথে শুনতে পান মানুষের পায়ের আওয়াজ এবং তাদের কণ্ঠস্বর। কিন্তু শব্দগুলো অনেক দূর থেকে আসছিল এবং অস্পষ্ট ছিল।
তিনি তার শক্তি সঞ্চয় করার সিদ্ধান্ত নেন এবং বাইরে থেকে আসা আওয়াজ কাছাকাছি না আসা পর্যন্ত চুপ থাকেন। তিনি প্রতিনিয়ত তার পরিবারের কথা ভেবেছিলেন; তার বুকের শিশুটি এবং স্বামী ও আরেক পুত্র ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কোথাও হারিয়ে গিয়েছে। নেকলা ভাবতে পারেননি যে, তিনি ধংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন। কিন্তু ইয়াগিজের উপস্থিতি তাকে আশাবাদী থাকার শক্তি দেয়। তিনি বেশিরভাগ সময় ঘুমাতেন এবং যখন তিনি কাঁদতে কাঁদতে জেগে উঠতেন, তখন তিনি স্থির না হওয়া পর্যন্ত নীরবে তাকে খাওয়াতেন।
ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েছিলেন নেকলার স্বামী ও আরেক সন্তান। তারাও জীবিত উদ্ধার হয়েছেন। মাটির নিচে ৯০ ঘণ্টারও বেশি সময় পরে নেকলা কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনতে পান। তিনি ভাবেন যে স্বপ্ন দেখছেন কিনা।
কুকুরের শব্দের সাথে মানুষের শব্দও তিনি শুনতে পান। ‘আপনি ঠিক আছেন? হ্যাঁ হলে একবার ধাক্কা দিন।’ ধ্বংসস্তূপের কাছে এসে এক ব্যক্তি এ কথা বলেন।
উদ্ধারকারীরা খুব সাবধানে তার সন্ধানে ধ্বংসস্তূপ খনন করতে শুরু করেন। তিনি তখনও ইয়াগিজকে ধরেছিলেন। হঠাৎ তার চোখের ওপর টর্চের আলো জ্বলে উঠলে অন্ধকার কেটে যায়। ইস্তাম্বুল মিউনিসিপালিটির ফায়ার ডিপার্টমেন্টের উদ্ধারকারী দল যখন জিজ্ঞাসা করে ইয়াগিজের বয়স কত, নেকলা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। তিনি কেবল জানতেন যে ভূমিকম্পের সময় তার বয়স ছিল ১০ দিন।
ধ্বংসস্তূপে মায়ের বুকের দুধ পান করে সুস্থ ছিল শিশু ইয়াগিজ। শরীরে কোনও গুরুতর জখমও হয়নি তার। কিন্তু তাদের পায়ে ও পায়ের পাতায় গুরুতর জখম থাকায় কয়েক ঘণ্টা দূরে আদানা প্রদেশের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।