সৌদি আরবে আসলেই কি মসজিদে মাইক-ইফতার বন্ধ?
সাদাকালো নিউজ
পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে নতুন কিছু আইন জারি করেছে সৌদি সরকার। ২২ মার্চ থেকে যা কার্যকর করা হয়েছে। এবার এই নতুন আইন মেনেই সিয়াম সাধনা করতে হবে সৌদি আরবের মুসুল্লিদের। কি আছে সেই নতুন আইনে, যা বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়কে হতাশ করেছে! একিসঙ্গে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
শুরুতেই আপনাদের জানিয়ে রাখা ভালো- নতুন আইনে মসজিদের মাইক, উচ্চশব্দ ও ইফতার নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে যে খবর প্রচার করা হচ্ছে তা মোটেও সত্য নয়। গেল তেশরা মার্চ সৌদির ইসলামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১০টি ধারা সম্পর্কিত যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তার কোথাও আজানে মাইক ও উচ্চশব্দ ব্যবহার নিয়ে উল্লেখ নেই।
প্রকৃতপক্ষে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সৌদির মসজিদে আজানের জন্য বাইরে রাখা লাউডস্পিকারের সংখ্যা কমিয়ে দেয়া হয়। তারও আগে ২০২১ সালের রমজানে মসজিদের লাউডস্পিকারে উচ্চশব্দ ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। এরপর থেকেই স্পিকার ব্যবহারে সর্বোচ্চ তিন ধরনের উচ্চশব্দ ব্যবহার করা যায়। উচ্চশব্দ শিশু ও বৃদ্ধদের সমস্যা করছে দেশটির নাগরিকদের এমন অভিযোগ আসার পর এই নির্দেশনা জারি করে সৌদি প্রশাসন।
এছাড়াও নতুন বিজ্ঞপ্তিটির ৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, মসজিদে ক্যামেরা স্থাপন করা যাবে না। সেইসঙ্গে মসজিদের ইমাম ও মুসল্লিদের প্রার্থনারত ছবি তোলা যাবে না। এমনকি মিডিয়ায় নামাজের বিষয়ে কোনো কিছুই প্রচার করা যাবে না।
বিজ্ঞপ্তির ৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, রমজান মাসে রোজাদারদের জন্য ইফতারের আয়োজন মসজিদের এড়িয়ার মধ্যে করতে হবে। আর এর সকল দায়িত্বে থাকবেন মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন। কোনোভাবেই মসজিদের ভেতরে ইফতারের আয়োজন করা যাবে না। আর ইফতার শেষ হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে।
নতুন নির্দেশনায় আরও রয়েছে- মসজিদে ইফতারের জন্য মুসল্লিদের কাছ থেকে কোনো ধরনের অর্থ নেয়া যাবে না। জরুরি কাজ ছাড়া ইমাম বা মোয়াজ্জিন মসজিদে অনুপস্থিত থাকতে পারবেন না। একিসঙ্গে তারাবির নামাজ, তেলাওয়াত আর দোয়া দীর্ঘ করা যাবে না। ফজরের নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের যাতে সমস্যা না হয় সে কারণে তাহাজ্জুদের নামাজ ফজরের আগেই শেষ করতে হবে।
নির্দেশনায় মসজিদে সরকার অনুমোদিত দরকারি বই পড়ার ওপর বিশেষ গুরত্ব দিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও মসজিদে শিশুদের না নিয়ে যাওয়ার জন্যও বলা হয়েছে। নারীদের নামাজের স্থান পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। নতুন এসব বিধি সবাই মানছেন কিনা তা যাচাই করবেন ইমামগণ। এমনকি ইতিফাকের জন্য অনুমতি আর মসজিদে অবস্থানকারীদের তথ্যও সংরক্ষণ করবেন ইমামরাই।
রমজান মাসে সৌদি সরকারের এমন নির্দেশনায় ক্ষোভ জানিয়েছে বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়। আর দেশটির সরকারবিরোধীরা বলছেন, নতুন বিধি চালু করে ইসলাম ভিত্তি থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে সরকার। এসব করে তারা তাদের একনায়কতন্ত্র ফলাচ্ছে।
তবে নিয়মগুলোর পেছনে সুনির্দিষ্ট যুক্তি আছে বলে জানিয়েছে সৌদি মন্ত্রণালয়। তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইফতার করতে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। শুধুমাত্র মসজিদের পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা এবং শৃঙ্খলা রক্ষা করতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।