সাবমেরিন টাইটান নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে!
সাদাকালো নিউজ
টাইটানিকের মতো আটলান্টিক মহাসাগরে চিরদিনের মতো হারিয়ে গেছে সাবমেরিন টাইটান। তবে টাইটানের কিছু অংশ শনাক্ত করা গেলেও টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া পাঁচ আরোহীর দেহ শনাক্ত করা যায়নি।
টাইটান হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র বেসরকারি মালিকানাধীন সাবমার্সিবল। যা সমুদ্রের তলদেশে চার হাজার মিটার গভীরে পর্যন্ত যেতে পারত। সাগরের সবচেয়ে গভীরে যেতে সক্ষম মার্কিন সাবমেরিন ইউএসএস ডলফিনের চাইতেও অনেক বেশি গভীরতায় যেতে সক্ষম ছিলো প্রায় ২৩ হাজার পাউন্ড ওজনের টাইটান। পর্যটকদের টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার সুযোগ করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিলো এটি।
২০১৮ সালে টাইটানের সমুদ্রে ট্রায়াল দেয়া শুরু হয়। ২০২১ সালে এটি প্রথম যাত্রা করে। গত বছর এটি ১০ বার সাগরের তলদেশে গেছে। এই সাবমার্সিবলের ভেতরের জায়গা এতোটাই সংকুচিত ছিলো যে পাঁচ জনের বেশি মানুষকে জায়গা দেয়া সম্ভব ছিলো না। এর মধ্যে একজন পাইলট আর বাকি চারজন যাত্রী ছিলো। ঘণ্টায় ৩ দশমিক ৪-৫ মাইল বেগে চলতে সক্ষম ছিলো টাইটানটি। এটির ছিলো চারটি ইলেকট্রনিক ইঞ্জিন।
সমুদ্রের তলদেশে গভীরতা থাকায় প্রচণ্ড ঠাণ্ডা অনুভব হতে পারে, তাই ডুবোযানটির দেয়ালও উষ্ণ তাপমাত্রায় রাখা হয়। ডুবোযানটির বাইরে ছিলো শক্তিশালী আলোর ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখা যেতো। টাইটানটির বাইরে একাধিকা ফোর ক্যামেরা সংযুক্ত করা ছিলো। সেই সঙ্গে ভেতরে বিশাল ডিজিটাল স্ক্রিনেও টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার ব্যবস্থা ছিলো। ডুবোযানের সামনের দিকে যাত্রীদের জন্য ছিলো একটি ব্যক্তিগত টয়লেট। সেটি ব্যবহারের সময় পর্দার মতো উঠে যায় এবং সে সময় পাইলট কিছু মিউজিক ছেড়ে দিতেন।
তবে কোম্পানির দেয়া তথ্যানুযায়ী, এ ধরনের অভিযানে আসার আগে থেকেই নিজের ডায়েট সীমাবদ্ধ করতে হবে এবং পানির নিচে থাকার সময় যেন টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজন কম পড়ে সেদিকেও সচেতন থাকতে হবে। সাগরের তলদেশে পৌঁছালে স্বাভাবিকভাবে টাইটানের জিপিএস কাজ করতো না। তার বদলে একটি বিশেষ টেক্সট মেসেজ সিস্টেমের মাধ্যমে পানির ওপরে থাকা সাপোর্ট জাহাজ থেকে নির্দেশাবলি পেয়ে থাকতো টাইটান। একটি মডিফায়েড ভিডিও গেম কন্ট্রোলারের সাহায্যে বাহনটি পরিচালনা করতেন পাইলট।
গেল বছর সিবিএস নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওশানগেটের প্রতিষ্ঠাতা স্টকটন রাশ বলেছিলেন, এই ডুবোযানটি পরিচালনা করতে খুব বেশি দক্ষতার দরকার হয় না। এবারের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন রাশও।
পানির নিচে যাওয়ার আগে একটি সহায়তাকারী দল যাত্রীদের সাবমার্সিবলের ভেতরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা টেনে ১৭টি বোল্ট দিয়ে আটকে দিতেন। অর্থাৎ ভেতরে থাকা যাত্রীদের বাইরে বের হওয়ার কোনোরকম সুযোগ ছিল না। এই যাত্রা মোটেও নিরাপদ ছিলো না। এ কারণে টাইটানে ভ্রমণ করার আগে সব আরোহীকে একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে হতো। যেখানে ইনজুরি, মানসিক আঘাত থেকে শুরু করে পরপারে যাওয়া পর্যন্ত অনুমতি নেয়া থাকতো।
গেল বৃহস্পতিবার টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের প্রায় ১৬০০ ফুট দূরে পাওয়া গেছে টাইটান। ইতিমধ্যে এটির বেশ কিছু অংশ শনাক্ত করা গেছে। মার্কিন কোস্টগার্ড জানিয়েছে, মহাসাগরের তলদেশে পানির চাপ নিতে না পেরে ধ্বংস হয়েছে টাইটান। এতে থাকা পাঁচ যাত্রী পরপারে পাড়ি দিয়েছেন। ওশানগেটের প্রতিষ্ঠাতা স্টকটন রাশ ছাড়াও টাইটানে ছিলেন ব্রিটিশ ধনকুবের, বিমান সংস্থা অ্যাকশন এভিয়েশনের চেয়ারম্যান হামিশ হার্ডিং, পাকিস্তানের এংরো করপোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাদা দাউদ ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ এবং ফরাসি পর্যটক পল অঁরি নারজিলে।