শর্ত শিথিলের পরও পুঁজিবাজারে আসেনি ২৫ বীমা কোম্পানি
সাদাকালো নিউজ
নিবন্ধন শর্ত, জরিমানা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা, কোনো কিছুই ২৫টি বীমা প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে পারেনি। বীমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন ধরনের শর্ত, পরিশোধিত মূলধনের ঘাটতি, মুনাফায় না থাকা এবং সদিচ্ছার অভাবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি এসব কোম্পানি।
এ বিষয়ে সাধারণ বীমা করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার আহসান বলেন, নানা কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় না বীমা কোম্পানিগুলো। অনেকেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিধিবিধান প্রতিপালনে অনাগ্রহী। এ ছাড়া পরিচালনা বোর্ড অন্য কাউকে ঢুকাতে চায় না। আর সরকারি বীমা করপোরেশনগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পুরোটাই সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে।
দেশে লাইফ, নন-লাইফ মিলিয়ে বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৮১। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৫৬।
যদিও বীমা কোম্পানির নিবন্ধনে তিন বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির শর্ত পূরণে বাধ্যবাধকতা আছে, যা পূরণ না করলে প্রতিদিনের জন্য জরিমানা গুনতে হয় বীমা কোম্পানিকে। সেটাও টাকার অঙ্কে কম নয়। প্রতিদিনের জন্য ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে আইডিআরএ।
২০২১ সাল পর্যন্ত বড় জরিমানা দিয়েও তালিকাভুক্তির বাইরে ছিল ৩২টি বীমা কোম্পানি। এসব কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা তালিকাভুক্ত না হওয়ার যুক্তি হিসেবে তুলে ধরে পরিশোধিত মূলধনের ঘাটতি। কারণ পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকার নিচে হলে বীমা কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারত না। এ ছাড়া ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকার প্রাথমিক গণ প্রস্তাব (আইপিও) ছাড়ার বাধ্যবাধকতাও ছিল।
২০২২ সাল পর্যন্ত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাধারণ বীমা কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪২টি এবং জীবন বীমা কোম্পানি ১৪টি। বিএসইসির তালিকাভুক্তির শর্তে ছাড় এবং অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা কোনো কিছুই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত বীমা প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা করপোরেশন ও সাধারণ বীমা করপোরেশনকে।
যেসব বীমা কোম্পানি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হয়েছে তারা আবার মানছে না বীমা আইন ২০১০-এর তফসিল-১-এর ধারা ১ (ক) এবং ১(খ) ধারার শর্ত।
কারণ বীমার জন্য বাংলাদেশে নিবন্ধিত কোম্পানির ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধনের ৬০ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অবিশষ্ট ৪০ শতাংশ মালিক হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া সাধারণ বীমা কোম্পানির নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা এবং জীবন বীমার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা হওয়ার শর্ত আছে।
যদিও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৪টি জীবন বীমা কোম্পানির মধ্যে মাত্র ১টি প্রতিষ্ঠানের ৬০ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালকরা ধারণ করছেন। বাকিগুলোর বেশিরভাগের উদ্যোক্তা পরিচালকদের ধারণ করা শেয়ারের সংখ্যা ৪০ শতাংশের নিচে। আর সাধারণ বীমা কোম্পানির মধ্যে ১০টি কোম্পানি আইডিআরএর নিবন্ধন শর্ত মেনে চলছে, বাকিগুলোর বেশিরভাগ ৪০ শতাংশের নিচে শেয়ার ধারণ করছেন উদ্যোক্তা-পরিচালকরা।
এ বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম জানান, ৬০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্তটি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের। তাই এর প্রতিপালন হচ্ছে কি না তা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষই দেখবে। আর যেসব বীমা প্রতিষ্ঠান এখনও পুঁজিবাজারে আসেনি, তারা সব শর্ত পূরণ করে আবেদন করলে ইতিবাচক হিসেবে দেখবে কমিশন। বর্তমানে বীমা কোম্পানির কোনো আইপিও আবেদন বিএসইসিতে জমা নেই।
এ ছাড়া সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে তালিকাভুক্ত হতে পারেনি সিকদার ইনস্যুরেন্স, সাউথ এশিয়া ইনস্যুরেন্স, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইনস্যুরেন্স এবং সাধারণ বীমা করপোরেশন। এসব প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত না হওয়া পেছনে লাইফ ফান্ড ঘাটতি, পরিশোধিত মূলধনের ঘাটতির সমস্যা রয়েছে।