রেহাই পাচ্ছেন না স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি ডা. আবুল কালাম আজাদ
জহুরা প্রিতু
রিজেন্টকান্ডে রেহাই পাচ্ছেন না স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি ডা. আবুল কালাম আজাদ। লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকার পরও করোনার নমুনা সংগ্রহ এবং চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চুক্তি করে ‘সরকারি অর্থ আত্মসাতের’ মামলায় আসামি করা হচ্ছে তাঁকে।
একই মামলায় কারাগারে থাকা রিজেন্ট চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদের সঙ্গে তাঁর যোগসাজসের বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ মিলেছে বলেই, মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি সোমবার গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক-এর সচিব মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান, সাবেক ডিজি আজাদসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র অনুমোদন দিয়েছে দুদক। অভিযোগপত্রে দুদকের মামলায় সাবেক ডিজি আজাদকে ছয় নম্বর আসামি করার কথা বলা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন — রিজেন্টের হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক আমিনুল হাসান, হাসপাতাল-১ শাখার উপ-পরিচালক ইউনুস আলী ও সহকারী পরিচালক শফিউর রহমান এবং গবেষণা কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম।
শিগগিরই এই অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের কর্মকর্তারা। তাঁরা জানান, রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণা মামলায় অন্তর্ভূক্তির পাশাপাশি সাবেক ডিজি আজাদের সম্পদের তথ্যও অনুসন্ধান করছে দুদক।
দুদক সূত্র বলছে, করোনার নমুনা পরীক্ষা এবং চিকিৎসার খরচ হিসেবে মোট তিন কোটি ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টম্বর একটি মামলা দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী। সেসময় আসামির তালিকায় ছিল না আবুল কালাম আজাদের নাম।
পরে মামলার বাদী ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীকেই মামলার তদন্তে নিযুক্ত করে দুদক। এক বছরের তদন্ত শেষে আবুল কালাম আজাদকে যুক্ত করে দুদকে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। সোমবার তা অনুমোদন করেছে দুদক।
জানা গেছে, পরীক্ষা না করেই করোনা শনাক্তের ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে সরকারের কাছে বিল চাওয়া এবং একইভাবে চিকিৎসা না করে রোগীর কাছ থেকেও বিল নেয়াসহ নানা অনিয়মের প্রমাণ মেলে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে গত বছরের জুলাইয়ে অভিযান চালিয়ে হাসপাতালটির মিরপুর ও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেয় র্যাব। এর পরপরই ওই হাসপাতালের অনুমোদন বাতিল করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সেসময় বের হয়ে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায়, লাইসেন্সের মেয়াদ নেই জেনেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০১৯ সালের মার্চে রিজেন্ট হাসপাতালকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ‘নিবেদিত’ ঘোষণা করে সমঝোতা স্মারকে সই করেছিল।
অভিযোগ আছে, তৎকালীন মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের সহায়তায় অনুমোদনহীন হাসপাতালটির সঙ্গে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার চুক্তি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রিজেন্টের মালিকের সঙ্গে ডিজি আজাদের যোগসাজসের নানা তথ্য উঠে আসে খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে। কিন্তু তবুও আবুল কালাম আজাদকে শুরুতে দুদকের মামলায় আসামি করা হয়নি। কিন্তু তাঁকে নিয়মিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক।
২০১৬ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন ডা. আজাদ। সরকারি চাকরির বয়স শেষ হওয়ার পরও তাকে চুক্তিতে নিয়োগ দিয়ে একই পদে রেখেছিল সরকার। কিন্তু দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একের পর এক কেলেঙ্কারির খবর বের হতে থাকলে বিপাকে পড়েন ডিজি আজাদ। এক পর্যায়ে গত বছরের ২১ জুলাই মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে যান তিনি।
দুদকের মামলায় নাম আসার বিষয়ে আবুল কালাম আজাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত বছরের ১২ ও ১৩ অগাস্ট তাঁকে জিজ্ঞাসবাদ করে দুদক। সেসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যে কেউ অপরাধ করলে, তার কঠোর শাস্তি হোক, এটা তিনি চান। এজন্য যেকোনো তদন্তে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা দিবেন বলেও জানান তিনি।