যেভাবে হারিয়ে যান কুলসুম, ফিরে আসেন ৪৫ বছর পর!
রাকিবুল ইসলাম
এক দিন, সপ্তাহ, মাস কিংবা বছর নয়, নিজের পরিবারকে ছাড়া পার করেছেন জীবনের ৪৫টি বছর। এই সময়ে আবছা স্মৃতিতে খুঁজে বেড়িয়েছেন হারিয়ে যাওয়া আপনজনদের। ক্লান্ত হয়ে কেঁদেছেন নিভৃতে। তবে হাল ছাড়েননি। ৪৫ বছর পর হলেও খুঁজে বের করেছেন পরিবারের সদস্যদের।
গত শুক্রবার ম্যারিও নামে এক নারী সুদূর সুইজারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে ফেরেন শেকড়ের টানে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখেরটেকে থাকা পরিবারের কাছে। মায়ের বুকে। এই ম্যারিও-ই মাফিয়া বেগমের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে কুলসুম।
জানা গেছে, ১৯৭৭ সালে ছয় সন্তান নিয়ে টানাপড়েনের সংসার ছিল মাফিয়া বেগমের। এ অবস্থায় দুই মেয়ে কুলসুম ও সম্মেহেরকে নিয়ে বরিশাল থেকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে দেবরের বাসায় আসেন তিনি। মেয়েরা ভালো থাকবে এ আশায় মোহাম্মদপুরের একটি অনাথ আশ্রমে তাদের দিয়ে দেন মাফিয়া বেগম। কিন্তু দুই দিন পরই আশ্রম থেকে পালিয়ে মায়ের কাছে চলে আসে বড় মেয়ে কুলসুম। সেদিনই আশ্রমের দায়িত্বে থাকা নারীরা ফেরত নিয়ে যান কুলসুমকে।
সেই ছিল মা-মেয়ের শেষ দেখা। এরপর ৪৫ বছর মায়ের আঁচল থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল কুলসুম। কেননা আশ্রম থেকে স্বেচ্ছায় কুলসুমকে দত্তক নেন বার্থেলেমে-মারজুকা নামের এক সুইস দম্পতি। দত্তকনামায় বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক অফিস সহকারী। এতে উল্লেখ করা হয়, সুরক্ষা, শিক্ষা, চিকিৎসা, আইন অনুসারে সম্পত্তির ভাগ ও সর্বোপরি সন্তান হিসেবে সব অধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে স্বেচ্ছায় কুলসুমকে দত্তক নেন সেই সুইস দম্পতি।
২৩ জুলাই ১৯৭৭ সালে কুলসুমের নাম পরিবর্তন করে কুলসুম মারজুকা রেখে সব নিয়ম মেনে তাকে নিয়ে যায় সুইজারল্যান্ডে। এরপর থেকে বিদেশ বিভূঁইয়ে কাটতে থাকে কুলসুমের দিনকাল। কিন্তু বিদেশে বিলাসী জীবনেও শূণ্যতা ছিল কুলসুমের মনে। সজনদের থেকে দূরে থাকার হাহাকার তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিল। দীর্ঘ সময় পরিবারের শূন্যতা অনুভব করে বারবার স্মৃতিতে শুধু খুঁজে বেড়িয়েছেন মাকে।
মায়ের কাছে ফেরার চেষ্টাও অব্যাহত রাখেন কুলসুম। ১৯৭৭ থেকে ২০২১ সাল, দীর্ঘ ৪৪ বছর পর মায়ের খুঁজে স্বামী আন্দ্রে ম্যারিয়োকে নিয়ে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দেশে আসেন ম্যারিও কুলসুম। আবছা স্মৃতিতে খুঁজে ফেরেন হারিয়ে যাওয়া আপনজনদের। কিন্তু কোথাও কোন খোঁজ না পেয়ে ফিরে যান রিক্ত হাতে।