যেভাবে সমাহিত করা হলো অ্যাঞ্জেলা শ্রেয়াকে !
সাদাকালো নিউজ
মুহূর্তেই মানুষকে আপন করে নেয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিলো অ্যাঞ্জেলা শ্রেয়া বাড়ৈ-এর। সবার সঙ্গে খুব সহজেই মিশে যেতো সে। সবসময় মুখে যেন হাসি লেগেই থাকতো। সেই শ্রেয়া এখন মাটির ঘরে চিরনিদ্রায়। আর কখনও ফিরবে না নিজের প্রিয় ঘরে। এভাবেই তাঁর স্মৃতিচারণ করেন স্বজনরা।
গেল ১৩ই ফেব্রুয়ারি কানাডার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় টরন্টোয় সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রেয়াসহ তিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পরপারে পাড়ি দেন। অন্য দু’জন হলেন- আরিয়ান আলম দীপ্ত ও শাহরিয়ার খান মাহির। এ ঘটনায় গুরতর আহত হন আরও একজন শিক্ষার্থী। তিনি সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎপুত্র নিবিড় কুমার। দুর্ঘটনার সময় নিবিড় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শ্রেয়ার দেহ ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছায়। তার বাবা জেমস সুনাম বাড়ৈ ও ছোট ভাই এদ্রিয়ান শুভ বাড়ৈ অন্য একটি ফ্লাইটে ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ঢাকায় পৌঁছান। ২৭ ফেব্রুয়ারি শ্রেয়ার দেহ প্রথমে ফার্মগেটের মণিপুরি পাড়ার বাসায় নেয়া হয়। পরে সকাল ১০টার দিকে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য নেয়া হয় মগবাজারের চার্চে।
এদিন বিকেলে ফার্মগেটের হলি রোজারি চার্চে অ্যাঞ্জেলার জন্য দ্বিতীয় প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। পরে চার্চ সংলগ্ন স্থানে শ্রেয়াকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। মেয়েকে শায়িত করার আগে শ্রেয়ার বাবা জানান, ২০ বছর আগে ঈশ্বর শ্রেয়াকে আমার ঘরে পাঠিয়েছিলো। ১৩ই ফেব্রুয়ারি আবার তাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। আমার মেয়েটা কিছুটা চঞ্চল প্রকৃতির ছিলো। কিন্তু মানুষকে সে খুব ভালোবাসতো। খুব সহজেই সবকিছু মানিয়ে নিতে পারতো। খুব উদার ছিলো সে।
সবার কাছে অনুরোধ জানিয়ে শ্রেয়ার বাবা বলেন, জীবদ্দশায় আমার মেয়ে যদি কারো সাথে কোনো ভুল বা অন্যায় করে থাকে দয়া করে আপনারা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আজকে শেষবারের মতো তাকে আর্শীবাদ করবেন। আমাদের জন্যও প্রার্থনা করবেন। যাতে এই শোক সইবার শক্তি ঈশ্বর আমাদের দেন।
পরে শ্রেয়ার আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনা ও স্মৃতিচারণ করা হয়। সেখানে পরিবারের সদস্য ছাড়াও স্বজন ও বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন। প্রার্থনা অনুষ্ঠানে বলা হয়, সৃষ্টিকর্তার ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর কাছে ফিরে গেছেন অ্যাঞ্জেলা। তাঁর ক্ষুদ্র জীবনের জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
অন্যদিকে কানাডা সড়কে পরপারে যাওয়া অন্য দু‘জনের দেহ দেশে আসতে আরও দু-একদিন সময় লাগবে বলে জানা গেছে। ওই ঘটনায় আহত নিবিড় কুমার এখনও শঙ্কামুক্ত নন।
এদিকে সন্তান হারানোর শোকে পাগলপ্রায় শ্রেয়ার মা এডলিন মিতালি বাড়ৈ। কারও সাথে কথা বলেন না। শুধু এক মনে তাকিয়ে থাকেন আর কাঁদেন। এখন অপেক্ষা শুধু মেয়ের। আর কিছু চাওয়া নেই তার। অশ্রুশিক্ত চোখে শ্রেয়ার মা জানান, এভাবে বিদায় নেয়ার কথা ছিলো না শ্রেয়ার। আমরা যদি মেয়ের সঙ্গে কানাডায় থাকতাম তাহলে আজকে এমন দিন দেখতে হতো না।