মেম্বারের ৩য় স্ত্রী হতে ২ সন্তান রেখে ঘর ছাড়লেন নারী ইউপি সদস্য!
সাদাকালো নিউজ
স্বামী ও দুই সন্তানকে ফেলে রেখে নারী ইউপি সদস্য আরেক ইউপি সদস্যের হাত ধরে উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনদিন ধরে তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের ব্যক্তিগত মুঠেফোন নম্বরও বন্ধ রয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদে।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইশাখাবাদ গ্রামের প্রয়াত খোরশেদ মোল্লার ছেলে ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. সাদ্দাম মোল্লার (৩০) সঙ্গে একই ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য নাজমা আক্তারের (৩০) দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। বিষয়টি নিয়ে নাজমা আক্তারের সঙ্গে তার স্বামী মো. ইছাক মিয়ার মনোমালিন্য চলছিল।
গত ১ জুলাই বিষয়টি নিয়ে নাজমা আক্তারের সঙ্গে তার স্বামীর কথাকাটাকাটি হয়। এর প্রেক্ষিতে নাজমা বেগম স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। পরদিন ২ জুলাই থানা থেকে তাদের ডেকে পাঠায়। রোববার সকালে মো. ইছাক মিয়া তার পরিবারের লোকজনসহ তার শ্বশুরবাড়ির লোকদের সঙ্গে নিয়ে থানায় যান। কিন্তু তাদের সঙ্গে নাজমা বেগম থানায় যাননি।
তারা নাজমা বেগমকে ডাকলে তিনি বলেন, আমি থানা চিনি। আমাকে থানা চেনাতে হবে না। পরবর্তীতে মো. ইছাক মিয়াসহ সবাই থানা থেকে বাড়ি ফিরে এসে দেখেন নাজমা আক্তার বাড়িতে নেই। পরিবারের লোক সবাই ভেবেছিলেন তিনি হয়তো থানায় গেছেন, চলে আসবেন। কিন্তু সন্ধ্যা পার হলেও তিনি ফিরে না আসায় তার মুঠোফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনার পর থেকে ৩নং ইউপি সদস্য মো. সাদ্দাম হোসেনও এলাকায় নেই। তার মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। পরে এ ঘটনায় নাজমার স্বামী হরিরামপুর থানায় নাজমার পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মো. সাদ্দাম মোল্লা এ পর্যন্ত দুটি বিয়ে করেছেন। দু’জনের সঙ্গেই প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে তাদের বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীকে সন্তানসহ তিনি তালাক দিয়েছেন। সাদ্দামের বর্তমান (দ্বিতীয়) স্ত্রী বিদেশে থাকেন।
নাজমার স্বামী মো. ইছাক মিয়া বলেন, সাদ্দামের সঙ্গে আমার স্ত্রীকে চলাফেরা করতে নিষেধ করলেও তিনি তা মানেনি। আমাদের ১৪ বছরের সংসার। আমাদের দুইটি ছেলে সন্তান রয়েছে। একজন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও আরেকজন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। নাজমা বেগম আমার বাড়ি থেকে এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা এবং দেড় ভরি স্বর্ণের গহনা নিয়ে গেছে। তার কোনো খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না। আমি এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।
এ ব্যাপারে জানতে সাদ্দাম মোল্লা ও নাজমা আক্তারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। সোমবার সাদ্দামের বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। সাদ্দামের মা জানান, সাদ্দাম বাড়িতে নেই।
বিষয়টি লজ্জাজনক জানিয়ে রামকৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের জনপ্রতিনিধিদের কাছে জনগণ ভালো কিছু পাবে না। আমি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। আমার ইউনিয়নের মেম্বাররা যদি এধরনের কাজ করে, সেটা তো আমারও মাথা ব্যথা হওয়া উচিৎ। যেহেতু আমি দুইদিন তাদের খোঁজাখুঁজি করে পেলাম না। বাধ্য হয়ে ইউএনও মহোদয়কে জানিয়েছি। কারণ এভাবে কলঙ্ক নিয়ে তো আমি ইউনিয়ন পরিষদ চালাতে পারবো না।
এ ব্যাপারে হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার আদিত্য জানান, একটি অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি নিয়ে আমরা অনুসন্ধান করছি।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান জানান, বিষয়টি নিয়ে অবগত আছি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অফিসিয়াল রিপোর্ট দিলে জেলা প্রশাসক স্যারকে চিঠি দিয়ে জানাবো। এবিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা পেলে আইন অনুযায়ী দুই ইউপি সদস্যকে শোকজ করা হবে। আর শোকজের সন্তোষজনক জবাব না পেলে পরবর্তীতে তাদের বহিষ্কার করা হতে পারে বলেও জানান তিনি।