আশরাফ হাকিমি এবং এক লড়াকু পরিবারের গল্প !
সাদাকালো নিউজ
অতীতে উঁকি দিলে আশরাফ হাকিমি দেখতে পান শুধুই দারিদ্র্য। এখন তিনি ফুটবলের মহাতারকা। ঝলমলে ক্যারিয়ার। চারপাশে শুধু নৃত্য করে সাফল্য।
কাতার বিশ্বকাপে শেষ ষোলোর ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে টাইব্রেকারে শেষ শটটা নেন হাকিমি। গোল করেই ছুটে যান গ্যালারিতে মায়ের কাছে। ছেলের মা-ভক্তি দেখে দর্শকরাও আপ্লুত হন।
হাকিমি তার জার্সি খুলে মা’কে উপহার দেন। মায়ের সাথে বিজয়ের উল্লাস করেন। কিন্তু পিএসজির এই ডিফেন্ডারের ফুটবলযাত্রা রূপকথার গল্পকেও হার মানায়।
হাকিমির জন্ম আফ্রিকায়। তার বাবা হাসান ও মা সাঈদা, আফ্রিকা ছাড়েন সুখের সন্ধানে। পরিবার সামলাতে মা কাজ নেন গৃহকর্মীর। আর বাবা পথে পথে ফেরি করে বিক্রি করতেন ফল-মুল।
দারিদ্র্যে বেড়ে ওঠা হাকিমি নিজের অতীত নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠিত হন না। জীবনের সূচনালগ্নে দারিদ্র্যের কশাঘাতে কী দুর্বিষহ সময় না কেটেছে তার। সেসব স্মরণ করেন সময়ে-অসময়ে। আর বাবা-মা’র প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, তার প্রতি তাদের সমর্থনের জন্য।
ইচ্ছে করলে স্পেনের হয়ে খেলতে পারতেন হাকিমি। কিন্তু সেটা না করে তিনি খেলছেন মরক্কোর জন্য। জন্মসূত্রে স্পেনের নাগরিক হলেও হাকিমি মরক্কোরও নাগরিক।
মরক্কোর একটি ছোট্ট গ্রাম থেকে হাকিমির পরিবার চলে আসে স্পেনে। ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর মাদ্রিদে জন্মগ্রহণ করেন হাকিমি। ছেলেবেলায় হাকিমিকে খেলার দিকে ঠেলে দেন তার মা। মা চেয়েছিলেন জুডো কিংবা সাঁতার নিয়ে থাকুক ছেলে। কিন্তু হাকিমি বেছে নেন ফুটবল।
মাত্র ৭ বছর বয়সে ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের নজরে আসেন হাকিমি। পরে অনুশীলন, একাগ্রতা আর পরিশ্রম দেখে রিয়াল তাকে নিজেদের একাডেমিতে ভর্তি করে নেয়। বর্তমানে তিনি খেলছেন ফ্রান্সের বিখ্যাত ক্লাব পিএসজিতে। নিখুঁত লং পাসের জন্য খ্যাতি রয়েছে এই ডিফেন্ডারের।
বয়স যখন ১৮, সে সময়ের রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদান প্রথম সুযোগ দেন হাকিমিকে। জিদানের প্রতি কৃতজ্ঞতায় তাই আজও মাথা নুয়ে পড়ে হাকিমির। লা লিগা জায়ান্ট রিয়ালের হয়ে ডেব্যুর এক বছর পর হাকিমি যোগ দেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে। সেখানেই প্রসার হয় তার ক্যারিয়ার।
জার্মানিতে দারুণ দুটি মৌসুম কাটানোর পর মনে করা হয়েছিল, হাকিমি আবার ফিরে আসবেন রিয়ালে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডে তাকে বিক্রি করে দেয়া হয় ইন্টার মিলানে। ইতালিতে মাত্র এক মৌসুম কাটিয়ে ২০২১ সালে হাকিমি যোগ দেন পিএসজিতে।
হাকিমির স্ত্রীর নাম হিবা আবুক। তিনি স্প্যানিশ অভিনেত্রী। ভোগ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে এই দম্পতি স্থান পেয়েছেন। তাদের সংসারে রয়েছে দুই সন্তান। প্রথম সন্তানের জন্ম হয় ২০২০ সালে, দ্বিতীয়জনের চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে।