মডেলিং থেকে অপরাধ জগতে আরাভ খান
সাদাকালো নিউজ
দুবাইর স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। একজন পুলিশকে শেষ করে দেয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত আরাভের এফডিসিতে যাতায়াত ছিলো। তখনই তার সেলিব্রেটিদের সঙ্গে যোগাযোগটা গড়ে উঠে। নগদ টাকার জেরে নায়ক-নায়িকাদের সহজেই কাছে পান আরাভ খান। যেটির প্রমাণ পাওয়া গেছে, তার সোনার দোকানের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে।
জানা যায়, অভাব-অনটনের সংসার ছিল আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলামের। ফেরিওয়ালা বাবার সামান্য উপার্জনের টাকা দিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া তার জন্য সহজ ছিল না। এজন্য বাগেরহাটের চিতলমারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে পাড়ি জমান ঢাকায়। যাতায়াত শুরু করেন এফডিসিতে।
বিভিন্ন কৌশলে একটা সময় মডেলিংয়ের জগতে প্রবেশ করেন আরাভ। উঠতি বয়সি অনেক নারী মডেলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের টার্গেট করে ওই মডেলদের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকেন। এভাবে প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে মডেলিং থেকে হাঁটতে শুরু করেন অন্ধকার জগতে। জড়িয়ে পড়েন নানা অপরাধে। এতে তার সঙ্গী ছিল দেশের আরও কয়েকজন বিতর্কিত মডেল ও কথিত প্রযোজক।
বাগেরহাটের চিতলমারীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আরাভের বাবা ফেরি করে সিলভারের হাঁড়িপাতিল বিক্রি করতেন। ১৯৮৮ সালে আরাভ খানের জন্ম হয়। এই এলাকায় তিনি রবিউল নামে পরিচিত ছিলেন। পরিবারসহ ভাড়া থাকতেন ইদ্রিস তালুকদারের বাড়িতে। ২০১২ সাল পর্যন্ত তার পরিবার চিতলমারী ছিল। এর পরের খবর আর ওই এলাকার কেউ জানাতে পারেননি। তবে দীর্ঘদিন এলাকায় থাকার কারণে সেখানকার অনেকের সঙ্গেই তার এখনো যোগাযোগ রয়েছে।
আরাভের উত্থান নিয়ে তার ঘনিষ্ঠজন ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, স্কুলে পড়া অবস্থায়ই তার ইচ্ছা ছিল সিনেমায় কাজ করার। এরপর পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। দীর্ঘ সময় এফডিসির আশপাশে ঘোরাফেরা করেন। এর মধ্যে হোটেল বয় হিসাবে কাজ করেন। জড়িয়ে পড়েন ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে।
পরবর্তীকালে ফিল্ম পরিচালক হিসাবে নাম ও নম্বর দিয়ে কিছু কার্ড ছাপান। সেগুলো হাতিরঝিলসহ আশপাশের এলাকায় বিতরণ করেন। দৈনিক ৩০০-৪০০ কার্ড বিতরণ করলে ১০-১৫ জন তাতে সাড়া দিতেন। তারা মডেলিং করার আশায় আরাভের দেয়া স্থানে চলে যেতেন। এমন অনেকের কাছ থেকে আরাভ টাকাপয়সাও নিয়েছেন।
পরে আরাভ কিছু শর্ট ফিল্ম করেছিলেন। এগুলো করতে গিয়ে অনেক মেয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তাদের দিয়ে গুলশান-বনানীকেন্দ্রিক বড় চক্র গড়ে তোলেন। বদলে যেতে থাকে তার চলাফেরা ও চালচলন। শূন্য হাতে ঢাকায় আসা যুবক হয়ে ওঠেন প্রভাবশালী। এরপর তার বিরুদ্ধে অনেকের থেকে অন্যায়ভাবে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আসতে থাকে।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘আরাভ জুয়েলার্স’ উদ্বোধনে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের মতো তারকার নাম আসায় চাপা পড়ে যায় আরও অনেকের কার্যক্রম। যারা আরাভের আমন্ত্রণে সেখানে গিয়েছিলেন। এমন অন্তত সাতজনের নাম রয়েছে গোয়েন্দাদের হাতে। যাদের কয়েকজন কেবল আরাভের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন এমন নয়, বরং দেশে তার উত্থান ও অপকর্মের সহযোগী। তবে তদন্তের স্বার্থে এই ৭ অভিনয় শিল্পীর নাম পরিচয় জানানো হয়নি।