বিশ্বাস যার মূলমন্ত্র : ইমরান তাহির
সাদাকালো নিউজ
নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় মাত্র ১৬ বছর বয়সেই কাজে নেমে পড়তে হয়েছে তাকে। পরিবারের ভরণপোষণের জন্য শপিং মলে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। পরে কপাল খুলে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের স্পিন ট্রায়ালে। যদিও খুব বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেননি। নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়ে ছিটকে পড়েন। শুরু হয় নতুন যুদ্ধ। সিদ্ধান্ত নেন কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে ইংল্যান্ডে পারি জমানোর। বেশিদিন টিকতে পারেননি সেখানেও। ভাগ্যান্বেষণে ফের ২০০৫ সালে ২৬ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমান। ওই সময় প্রোটিয়ারা একজন মানসম্পন্ন স্পিনার খুঁজছিল। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলান তাহির। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকান সুমাইয়া দিলদারকে বিয়ে করে সেখানেই থিতু হন। সঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেটটাও চালিয়ে যান। এরপর সেখানে নজর কেড়ে জায়গা করে নেন দক্ষিণ আফ্রিকানদের ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ দলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ওয়ানডে অভিষেক হয় তার। ম্যাচে ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৪১ রান খরচায় ৪ উইকেট শিকার করেন তাহির। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ারে খেলেছেন অসংখ্য ক্লাবে। অর্থের সঙ্গে কুড়িয়েছেন সুনাম। তবুও ক্ষণিকের জন্য ভুলে যাননি সৃষ্টিকর্তাকে।
ঝরে পড়তে বসেছিলেন, তবে আস্থা হারাননি। বিশ্বাস রেখেছিলেন সৃষ্টিকর্তার ওপর। প্রবল ঝড়ের মধ্যে খড়কুটো আঁকড়ে ধরে তিনিও বাঁচার চেষ্টা করেছেন। ছুটেছেন ভাগ্যান্বেষণে। নিরাশ হতে হয়নি তাকেও। অপেক্ষার সুমিষ্ট ফলই পেয়েছেন। ভাগ্য তাকে টেনে এনে খ্যাতি দিয়েছে হাজার মাইল দূরের দেশে। পাকিস্তানে জন্ম ও বেড়ে ওঠা দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার ইমরান তাহিরের গল্প অনেকটা এমনই। যিনি নিজের কঠিন সময়ে ভেঙে পড়েননি। আবার নিজের সাফল্যের দিনে ভুলে যাননি তার রবকে। রমজান মাসে রোজা রেখেই মাঠে নামেন; এটাই তাহিরের কাছে সত্য এবং সহজ।
২০১৬ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাহির জানিয়েছেন ক্রিকেটের বাইরে তার ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে। জানিয়েছেন, রমজান মাসে রোজা রেখে খেলা কতটা সহজ তার কাছে। যা হতে পারে মুসলিম ক্রিকেটারদের জন্য অনুকরণীয়। তাহির বলেন, ‘আমার মনে হয় না বিশ্বাস বা ধর্ম অনুশীলনের সঙ্গে পেশাদার খেলায় ভারসাম্য বজায় রাখা খুব কঠিন। আপনি যদি সঠিক পথ অনুসরণ করেন তবে এটি খুব সহজ। আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ, তিনি আমাকে তার আরও কাছে নিয়ে গেছেন। আমি সর্বদা রমজানের নামাজ এবং ৩০টি রোজা মিস না করার চেষ্টা করি। তবে যদি কখনও ক্রিকেটের কারণে সেগুলো মিস হয়ে যায়, আমি পরে পূরণ করে নিই। ক্রিকেট খেলার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে আমাকে। তবে আমার পথ অনুসরণ করার ক্ষেত্রে আমার কোনো অসুবিধা হয়নি। বরং এর জন্য আমি সতীর্থ কোচ এবং স্টাফদের কাছ থেকে অধিক সম্মানিত হয়েছি। তাদের কেউ কেউ নামাজের জন্য আমাকে তাদের রুম ছেড়ে দিয়েছে।’
ইমরান তাহির দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম বোলার, যিনি এক দিনের ম্যাচে ৭ উইকেট শিকার করেছেন। এ ছাড়া দ্রুততম প্রোটিয়া বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট শিকারি বোলার তিনি। প্রোটিয়াদের মধ্যে চতুর্থ বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক করার কীর্তি রয়েছে তার।