বাইকে চা ফেরি করেন রনি, লড়ছেন মেম্বার পদে
সাদাকালো নিউজ
পেশায় চা বিক্রেতা রনি আহমেদ। করোনার সময় ক্ষতির মুখে হারিয়েছেন চায়ের দোকান। তারপরে আর দোকান দিতে পারেননি। তবে মোটরসাইকেল যোগে মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন নিজ হাতে বানানো চা। মোটরসাইকেলে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রির সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন রনি। রনি এলাকার মানুষের অনুপ্রেরণায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। ব্যাপক সমর্থনও পাচ্ছেন ।
রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী রনি আহম্মেদ। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপ্রার্থী। রনির প্রতীক ঘুড়ি। রনির বাড়ি ইউনিয়নের দহপাড়া গ্রামের তেঁতুলতলা এলাকায়।
রনির নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যায়, মোটরসাইকেলের দুই পাশে দুটি করে বড় বড় চারটি ফ্লাস্ক। এগুলো লোহার তৈরি খাঁচার মধ্যে রাখা। আসনের পেছনের দিকে আরেকটি লোহার তৈরি বাক্সের মতো ফ্রেমে রাখা হয়েছে ছোট ছোট প্লাস্টিকের কাপ, পানিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। মোটরসাইকেলের সামনে-পেছনে লাগানো আছে একাধিক নির্বাচনী পোস্টার। পোস্টারে লেখা- ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপ্রার্থী রনি আহম্মেদ। যখন যেখানে ফোন পাচ্ছেন, মোটরসাইকেলে চা নিয়ে সেখানেই ছুটে যাচ্ছেন। চা বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে দোয়াও চেয়ে নিচ্ছেন নিজের জন্য।
স্থানীয়রা জানান, সাত বছর বয়সে রনির মা মারা যায়। দুই সন্তানকে রেখে বাবা বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। রনি ও তার বোনের ঠাঁই হয় নানা-নানির সংসারে। নানা মারা গিয়েছিলেন আগেই। সংসার চালাতে শিশু বয়সে রনি তুলে নেন বাদামের ঝুড়ি। এরপর কিছুটা বড় হয়ে রনি ভ্যান চালাতে শুরু করেন। বিয়ের পর স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে আর্থিক অনটনে পড়েন। আট বছর আগে বাড়ির পাশে তেঁতুলতলা বাজারে ছোট একটি চায়ের দোকান দেন তিনি। যা পেতেন, তা দিয়ে সংসার চলতো।
২০২০ সালে করোনাকালে রাজশাহীতে বিধি-নিষেধ শুরু হলে চায়ের দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হন রনি। সংসার চালাতে দুই ফ্লাস্কে করে চা নিয়ে হেঁটে হেঁটে বিক্রি শুরু করেন। তারপর ঋণ করে মোটরসাইকেলে চা বিক্রি শুরু করেন ওই বছর থেকেই। এতেই চলছে তার সংসার। তার চায়ের মধ্যে মসলাযুক্ত রং চা ৫ টাকা এবং ব্ল্যাক কফি, দুধ কফি ও দুধ চা ১০ টাকা করে। রনিকে চা বানানোর কাজে সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী রানু বেগম।
রনি আহমেদ বলেন, করোনার সময় চায়ের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তারপর আর্থিকসহ নানা কারণে দোকান চালু করতে পারিনি। এরপরে মোটরসাইকেলে ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রি শুরু করেন। হাটে-বাজারে ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রির ফলে মানুষের কাছে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। যেসব মানুষ তার চা পান করেন, তারাই তাকে ভোটে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। তারাই তার নির্বাচনী খরচ বহন করছেন। নির্বাচনী সেবা হিসেবে শুধু তিনি মানুষকে চা খাওয়াচ্ছেন, সেই টাকাও অনেকে দিয়ে দিচ্ছে।
পবার হরিয়ান টিকটিকিপাড়ার ভোটার সুমন হোসেন বলেন, শুনেছি রনি অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে। তেঁতুল তলায় একটা চায়ের দোকান ছিল। করোনার সময় সে দোকানটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর রনি মোটরসাইকেল যোগে চা বিক্রি শুরু করে। চা বিক্রির সুবাদে রনির ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। রনির ভোটে দাঁড়ানো বিষয়টি এলাকার মানুষ সুন্দর ও সহজভাবে নিয়েছে।
নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, রনি এলাকার ভালো ছেলে। চা বিক্রি করে সংসার চালায়। তার মধ্যে ভালো কিছু করার চিন্তা আছে। এ কারণে তাকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। রনি অন্য প্রার্থীদের চেয়ে আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকলেও তার কাজ করার মনমানসিকতা আছে।
পবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, আগামী ১৭ জুলাই ৯ নং ওয়ার্ডের ৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে ১০ জন ও সংরক্ষিত আসনে সদস্য পদে ১৯ জন এবং সাধারণ আসনে সদস্য পদে ৫৫ জন। মোট ৮৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ হাজার ৫২৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ৮৫০ জন ও নারী ভোটার ৯ হাজার ৬৭৮ জন।