প্রতিবেশীদের ফাঁসাতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন নিজেই!
সাদাকালো নিউজ
মা হারানো সন্তানদের আর্তনাদ, সোশ্যাল মিডিয়ায় মাকে ফিরে পেতে করুণ আকুতি, সবটাই পরিকল্পিতভাবে করেছিলেন খুলনার রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এমন নাটক সাজিয়েছিলেন বলে দাবি পিবিআইয়ের। সোমবার আদালতে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।
গেল বছরের ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করেন মেয়ে মরিয়ম মান্নান। সে সময় তার আবেগতাড়িত বক্তব্য ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ঘটনার রাতেই খুলনার দৌলতপুর থানায় ৫ জনের নামে তুলে নিয়ে যাওয়ার মোকদ্দমা করেন ছোট মেয়ে আদুরী আক্তার। চাঞ্চল্যকর মোকাদ্দমাটির তদন্তভার পিবিআইকে দেয় আদালত। পাঁচ মাস তদন্ত শেষে পিবিআই জানিয়েছে, রহিমা বেগমকে কেউ তুলে নিয়ে যায়নি বরং পরিকল্পিতভাবে তিনি লুকিয়ে ছিলেন। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিবেশী পাঁচটি পরিবারকে শায়েস্তা করতেই এই নাটকটি সাজিয়েছিলেন রহিমা ও তার দুই মেয়ে।
খুলনা পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খুলনা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, আজ সকালে মোকদ্দমার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বাদীকে ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ব্যাপারে জানানো হয়েছে। পরবর্তী সময় তা লিখিত আকারেও জানানো হবে।
তদন্তে উঠে এসেছে, পুরো ঘটনার পরিকল্পনা হয়েছিল ঢাকায় মরিয়ম মান্নানের বাসায়। ঘটনার দিন বিকেলে মরিয়ম বিকাশের মাধ্যমে খুলনায় মাকে এক হাজার টাকা পাঠান। সেই টাকা নিয়ে আত্মগোপনে যান মা রহিমা বেগম। এর ২০-২৫ দিন আগে ঢাকায় গিয়ে মরিয়ম মান্নানের বাড়িতে কয়েক দিন থেকেও এসেছিলেন রহিমা বেগম।
তদন্তকারী কর্মকর্তার ধারণা, বেশ আগে থেকেই পরিকল্পনা নিয়ে রহিমা বেগমের নিখোঁজের নাটক সাজিয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান। মূলত জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে ওই পরিকল্পনা করা হয়। ওই ঘটনার আগেও রহিমা বেগম বহুবার কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে আবার ফিরে আসেন।
প্রতিবেদনে রহিমা বেগম এবং তার দুই মেয়ে মরিয়ম মান্নান ও আদুরী আক্তারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করেছে পিবিআই। সেই সঙ্গে মোকদ্দমায় ফাঁসানো পাঁচ ব্যক্তির অব্যাহতির সুপারিশও করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কথা বলতে রাজি হননি মরিয়ম মান্নান। তবে মিথ্যা মোকদ্দমার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তারা বলছেন, যারা কোটি কোটি মানুষের আবেগ নিয়ে খেলেছে তার প্রকাশ্যে ঘুরে বেরাচ্ছে। পিকনিক করছে, আনন্দ করছে। তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হবেন তারা।