পুলিশের জালে সাধুপাড়া ইউনিয়নের ‘রাজা’ বাবু!
সাদাকালো নিউজ
অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়েছে সাংবাদিক নাদিম ঘটনায় অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। তিনি বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাধুপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
শনিবার পঞ্চগড়ের সীমান্তবর্তী এলাকা দেবীগঞ্জের চিলাহাটি ইউনিয়নের চর তিস্তাপাড়া থেকে বাবু চেয়ারম্যানকে ধরে পুলিশ। গণমাধ্যমকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন দেবীগঞ্জ থানার ওসি মো. জামাল হোসেন। তিনি জানান, র্যাবের একটি টিম পলাতক চেয়ারম্যান বাবুকে ধরে নিয়ে গেছে।
র্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, সেখানে এক আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন বাবু চেয়ারম্যান। এর আগে ভোররাতে বাবুকে আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িকভাবে বাদ দেয়া হয়। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর শাহিনা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইলের যৌথ স্বাক্ষরে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
জানা গেছে, বাবু চেয়ারম্যান একসময় সাধুপাড়া ইউনিয়নের নিজ গ্রামে একটি মুদির দোকান চালিয়ে দিনাতিপাত করতো। এরপর চাচাতো ভাই ইঞ্জিনিয়ার হারুনের সহযোগিতায় ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়ে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার নির্মাণের কাজ শুরু করে। ধীরে ধীরে দিন পাল্টে যায় তার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে জাতীয় ছাত্রসমাজের প্রথম সারির কর্মী ছিলেন বাবু। পরবর্তীতে ভোল পাল্টে রাজনীতি ছেড়ে নিরপেক্ষতার ভান ধরে। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ভিড়েন তিনি। দলে ভিড়েই একি বছর ইউপি নির্বাচনে অংশ নেন। শুরুতে ভোটে না জিতলেও ২০১৪ সালে সাধুপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। এরপর জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পদেও জায়গা পান।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকায় খুব সহজেই ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট পায় বাবু। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই নিজের অবস্থানও পাকাপোক্ত করে ফেলেন তিনি। এরপর অর্থ আর ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে চলতে শুরু করেন। পুলিশের সাবেক এক ডিআইজির চাচাতো ভাই হিসেবে সব জায়গায় শক্তি প্রদর্শন করতে থাকেন। একটা সময় হয়ে যান সাধুরপাড়া ইউনিয়নের অঘোষিত সম্রাট।
২০১৪ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর আর কোনো সম্মেলন হয়নি। তাই পদে থেকে ২০১৬ এবং ২০২১ সালে নৌকার মাঝি হয়ে নির্বাচনে জয় লাভ করেন মাহমুদুল আলম বাবু। একদিকে দুই বারের নৌকার চেয়ারম্যান, অন্যদিকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৯ বছরের সাধারণ সম্পাদক, বাবু আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন।
বাবুর চরিত্র প্রকাশ্যে আসে তখন, যখন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা নিজের অধিকার ফিলে পেতে সচ্চার হন। ঠিক সে সময় সংবাদকর্মী নাদিম বাবুর বিরুদ্ধে একের পর প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকে। এরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সে।
স্থানীয়দের ধারণা, বাবু হয়তো জানতো সাংবাদিক নাদিমকে কোনোভাবেই আটকানো যাবে না। তাই আগে থেকেই নাদিমকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে সে। আর সেই পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক নাদিমকে শেষ করে দেয় তার বাহিনীর সদস্যরা। আর এই ঘটনায় বাবু নিজে উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দেয় বলে জানিয়েছে নাদিমের সহকর্মীরা।