নেতাদের আত্মপ্রচারের মহড়ায় ম্লান শোকের আবহ!
সাদাকালো নিউজ
চলছে শোকের মাস আগস্ট। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার এই মাসে সাধারণত দলীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শুধু শোকের কর্মসূচি পালন করা হয় আগস্টে। এবারও পুরো মাসজুড়ে ৬৪টি সাংগঠনিক অনুষ্ঠানের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- শোকের ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য কারও ছবি থাকবে না।
তবে রাজধানীজুড়ে এর উল্টো চিত্র চোখে পড়েছে। নেতারা মানছেন না দলীয় নির্দেশনা। তাদের আত্মপ্রচারের মহড়ায় ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টারে ম্লান হয়েছে শোকের আবহ। খোদ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনের ব্যানার-ফেস্টুনে আত্মপ্রচারের মহড়া দেখা গেছে। নির্দেশ অমান্য করা ব্যক্তিদের কারও দাবি, তারা জানেন না। আবার কারও দাবি- ভুলে হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তবে বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তা বাতিল করে দেয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এসে জাতীয় শোক দিবস পুনর্বহাল করে। টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা দলটি প্রতি বছর শোকে আবহে নানা আয়োজনে আগস্ট মাস পালন করে। তবে দলীয় নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে প্রতি বছরই আগস্টের ভাবগাম্ভীর্য ম্লান হয়। আগস্ট ঘিরে ব্যক্তিগত মহড়া বন্ধের চেষ্টা গত কয়েক বছর ধরেই জোরালোভাবে করা হচ্ছে। তবে এত বছরেও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সেটা মানানো যায়নি।
রাজধানীর মিরপুর রোড, পল্টন, গুলিস্তান এলাকায় দেখা গেছে অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরীর ফেস্টুন। শোকের মাস উপলক্ষে এই ফেস্টুন সেঁটেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য কারও ছবি ব্যবহার না করতে বলা হলেও এর ব্যত্যয় ঘটেছে এই ফেস্টুনে। শোকের ওপর ভর করে আত্মপ্রচারে নেমেছেন তিনি।
জানা গেছে, ডা. এম আলমগীর চৌধুরী স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ- স্বাচিপের সদস্য। তিনি চট্টগ্রাম-১৬ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।
শোকের ব্যানারে আত্মপ্রচারের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শোকের ব্যানারে নিজের ছবি দেওয়া যাবে না, এমন কোনো নির্দেশনা আমি জানি না। আমার কাছে এমন কোনো নির্দেশনা পৌঁছায়নি।’
খোদ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনের ব্যানার-ফেস্টুনে আত্মপ্রচারের মহড়া দেখা গেছে। নির্দেশ অমান্য করা ব্যক্তিদের কারও দাবি, তারা জানেন না। আবার কারও দাবি- ভুলে হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান।
একইভাবে বড় বড় ফেস্টুনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এলাকা সয়লাব করেছেন পরিবহন মালিকদের নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। নিজের হাসিমাখা মুখে বড় বড় ছবি দিয়ে ফেস্টুন সেঁটেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এই সহ-সভাপতি।
দলীয় নির্দেশ অমান্য করে আত্মপ্রচারের বিষয়ে জানতে চাইলে এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘এটা ভুলে হয়েছে৷ আমাকে জানানো হয়নি, অফিস থেকে করে ফেলেছে। তবে ১৫ আগস্টের আগেই এসব ফেস্টুন সরিয়ে ফেলব।’
টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা দলটি প্রতি বছর শোকে আবহে নানা আয়োজনে আগস্ট মাস পালন করে। তবে দলীয় নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে প্রতি বছরই আগস্টের ভাবগাম্ভীর্য ম্লান হয়।
শোকের ব্যানার-ফেস্টুনে নগর ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের চেয়ে বেশি আত্মপ্রচার দেখা গেছে থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মীদের ছবিতে পূর্ণ শোকের ব্যানার চোখে পড়েছে।
পুরান ঢাকার নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে গুলিস্তান এলাকাজুড়ে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের পক্ষ থেকে শোক দিবস উপলক্ষে পোস্টারিং করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে প্রয়াত বাবা মেয়র হানিফের পাশাপাশি নিজের ছবিও জুড়ে দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতাসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের ছবি সম্বলিত এসব পোস্টার লাগানো হয়েছে পাবলিক টয়লেটের দেয়ালেও।
ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের সৌজন্যেও টানানো হয়েছে ব্যানার। যাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিজের মোনাজাত ধরা ছবি জুড়ে দিয়েছেন আলোচিত এই সংসদ সদস্য। একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সঙ্গে তার কর্মী সমর্থকরা ছবি দিয়ে শোক দিবসের ব্যানার টানিয়েছেন পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা। সব ব্যানারেই নিজেদের ছবি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর চেয়েও আকারে বড় করে দিতে দেখা গেছে।
শোকের ব্যানার-ফেস্টুন দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। সেখানেও দলীয় নির্দেশ অমান্য করে নিজের ছবির প্রচারণায় বেশি দেখা গেছে।