নিবিড় কুমারের গাড়ি চালানো নিয়ে পিলে চমকানো তথ্য দিলেন আরিয়ান দীপ্তের বাবা-মা
সাদাকালো নিউজ
বাড়ির দরজার বাইরে থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছিল। দরজা খুলে ফ্ল্যাটের ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল, রেজিনা সুলতানা ছেলে আরিয়ান দীপ্তের শোকে বিলাপ করছেন। কাঁদতে কাঁদতে তার চোখ লাল হয়ে গেছে। বাড়ির ভেতরের পরিবেশটা এমন, যেন আর কেউ কাউকে সান্ত্বনা দেয়ার নেই!
রাজধানীর নাখালপাড়ায় আরিয়ান দীপ্তের বাসায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। এ সময় পরিবারের লোকজন, বন্ধু-বান্ধবসহ বাসায় আরও আত্মীয়-স্বজন ছিল। সবার চোখ-মুখে ছিল যাতনা আর বিয়োগের গল্প! সবার দীর্ঘশ্বাসে ঝরছিল দীপ্তের স্বপ্ন!
আরিয়ান আলম দীপ্তের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলতে নারাজ তার পরিবার। আরিয়ানের বাবা-মায়ের দাবি, পরিকল্পিতভাবে তাদের সন্তানকে পৃথিবীকে থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তেরও দাবি করেন তাঁরা।
দীপ্তের বাবা এম আলমগীর জানালেন, তাঁর ছেলেকে জোর করে নিয়ে গেছে নিবিড় ও তাঁর বন্ধুরা। নিবিড়ের বন্ধু হওয়া স্বত্বেও, লাবিব নামের ছেলেটি নিবিরের গাড়িতে উঠেনি। সে একাই তার গাড়ি চালাচ্ছিলো। তাই লাবিবের আলাদা গাড়ি ব্যবহার করা, নিবিড়ের বেঁচে যাওয়া আর দীপ্তসহ বাকিদের প্রাণহানি — সবটাই রহস্যের সৃষ্টি করেছে। আমরা মনে করি, লাবীব এ বিষয়ে সবই জানে। তাই, লাবীবকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে।
দীপ্তের বাবা-মায়ের অভিযোগ, কুমার বিশ্বজিতের ছেলে নিবিড় কুমারের গাড়ি চালানোর লাইসেন্স স্থগিত থাকলেও সে গাড়ি চালাচ্ছিলো। সঙ্গে থাকা আরোহীদের ক্ষতি করার ইচ্ছে না থাকলে নিবিড় কেন ৫০ কিলোমিটার গতির রাস্তায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালাবে— সে প্রশ্নের উত্তরও চাইছেন তাঁরা। নিবিড়ের দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণ খতিয়ে দেখার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।
আরিয়ান দীপ্তের পরিবারের সদস্যরা জানান, নিবিড় কুমারের সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে থাকতেন আরিয়ান দীপ্ত। সম্প্রতি ওই ফ্ল্যাট থেকে লাবীব নামে নিবিড়ের এক বন্ধুর ১ হাজার ৮০০ ডলারের জ্যাকেট গায়েব হয়ে গেলে, দোষ দেয়া হয় দীপ্তকে। সেসময় দীপ্তকে মাররধর করে তাঁর কাছে থেকে জ্যাকেটের জরিমানা আদায় করে লাবিব। ফ্ল্যাট থেকেও দীপ্তকে বের করে দেয়। আবার তাদের সঙ্গে গিয়েই কেন প্রাণ যাবে দীপ্তের? — এই প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন পরিবারের সদস্যরা।
আরিয়ান দীপ্তের মা রেজিনা সুলতানার দাবি, তাঁর ছলেকে জোর করে ঘুরতে নিয়ে গেছে নিবিড় ও তার বন্ধুরা। আরিয়ানের সঙ্গে এক বন্ধুর চ্যাটের স্ক্রিনশটের কথা উল্লেখ করে রেজিনা সুলতানা বলেন, গায়ক কুমার বিশ্বজিতের ছেলে নিবিড় কুমারের সঙ্গে বের না হওয়ার অজুহাত হিসেবে নিজের কাছে টাকা নেই বলে জানায় আরিয়ান। কিন্তু অপর বন্ধু জানায়, এটা ওরা মানবে না।
আরিয়ানের মায়ের দাবি, না হলেও ১০ থেকে ১২ বার নিবিড় ফোন দিয়েছে, কিন্তু আরিয়ান এড়িয়ে গেছে। এরপর নিবিড় মেসেজ দেয়, আরিয়ান প্লিজ পিক আপ দ্য কল। তবুও আরিয়ান ফোন রিসিভ করে নাই। এরপর আবারও ফোন করার পর আরিয়ান ফোন রিসিভ করে। সেসময়, আরিয়ান নিবিড়কে জানায়, আমিতো বাইরে যেতে পারবো না, আমার ভালো লাগছে না। আর আমার কাছে টাকাও নাই।
তবুও নিবিড় ও তার বন্ধুরা এসে জোর করে আরিয়ানকে বাসা থকে ধরে নিয়ে যায় বলে দাবি করেন মা রেজিনা সুলতানা। সেদিন নিবিড়ের সঙ্গে তার বন্ধু লাবিবও ছিল বলে দাবি করেন আরিয়ানের মা। যেই লাবিবের জন্য এর আগেও মার খেতে হয়েছিল দীপ্তকে।
আরিয়ানের মা জানান, এর আগেও ঢাকায় বেশ কয়েকটা দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিলো নিবিড়। এমনকি কানাডায় গিয়েও কয়েকবার দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। যে ছেলে ঠিকমতো গাড়ি চালাতে পারে না। তাকে কেন গাড়ি কিনে দেয়া হল।
আরিয়ানের মায়ের দাবি, দুর্ঘটনার সময় নিবিড়ের সঙ্গে কার রেসিং করছিলেন লাবীব। সে সময় লাবীবের গাড়ি নিবিড়ের গাড়ির পেছনে ছিল। রেজিনা সুলতানার কাছে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই যে, দুর্ঘটনার অন্তত ১০ ঘণ্টা পর তাঁরা জানতে পেরেছেন। আরিয়ানের মায়ের দাবি, লাবিব ঘটনাস্থলে ছিল। কিন্তু সে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের জানায়নি। কারণ সে সারারাত নিবিড় কুমারের কাছে আইসিইউতে ছিলো।