জয়ের নায়ক মারুফা আক্তার
সাদাকালো নিউজ
প্রায় ১৯ বছরের এদিক-ওদিকের দুই জয়ে কী মিল! দুবারই ভারতকে ‘প্রথম’ হারানোর স্বাদ। ভাবছেন দুবারই প্রথম হয় কী করে? একবার ছেলেদের ক্রিকেটে, আরেকবার মেয়েদের ক্রিকেটে। দুই জয়ে মিল আছে অনেক। দুবারই ভারত ব্যাট করেছে শেষে, শেষ উইকেটটা গিয়েছে সরাসরি থ্রোতে, রান আউট হয়ে ফিরেছেন শেষ ব্যাটার।
ব্যাটারতবে সবচেয়ে বড় মিলটা ম্যাচের নায়কে। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর সে ম্যাচের নায়ক ছিলেন পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজা। আর গত রবিবার নারীদের প্রথম জয়ের নায়কও একজন পেসার, মারুফা আক্তার।
মাশরাফির ক্যারিয়ারে সংগ্রামের শুরুটা হয়েছে একেবারে গোড়া থেকেই। চিরবৈরী চোটের সঙ্গে পথচলার শুরুটাও যে তার ক্যারিয়ারের সঙ্গেই! ভাগ্যিস মারুফার সংগ্রামটা চোটের সঙ্গে নয়! তার সংগ্রামটা খানিকটা গতানুগতিক, অন্তত গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের বাস্তবতায়। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াইটা নজরে এসেছিল সেই করোনাকালে। মাঠে খেলা নেই, বাড়িতে তাই বাবার সঙ্গে হাল চাষের মই টানতে নেমে পড়েন। সে ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েও পড়েছিল তখন ভালোভাবে।
তখন মারুফার ভাবনায় ছিল ক্রিকেটটাই ছেড়ে দেওয়ার। পারিবারিক দুরবস্থায় খেলাটাকে খানিকটা বিলাসিতা বলেই ঠাহর হচ্ছিল তার। তবে বিসিবির চাওয়াতে তিনি আবারও ফিরে যান বিকেএসপিতে। ভাগ্যিস ফিরেছিলেন! না হলে কি অমন নায়ককে পেত বাংলাদেশ?
বাংলাদেশ সব ধরনের ক্রিকেট মিলিয়েই তো পেসার পেয়েছে হাতে গোনা ক’জন। নারীদের ক্রিকেটে জাহানারা আলমই তো বহুদিন ধরে টেনেছেন দলের পেস বিভাগকে। মারুফা সে বিরলপ্রায় গোত্রেরই একজন। বিশেষত্বও আছে বৈকি! গতির সঙ্গে বাতাসে বল মুভ করানোর দক্ষতা থাকে ক’জনের! মারুফার ছিল সেটাই।
বয়সভিত্তিক দলে জায়গা পেলেন, অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করে পেলেন জাতীয় দলের টিকিটও। টি-টোয়েন্টিতে তার শুরুটা হয়েছিল বেশ। ৯ ম্যাচ খেলে পেয়েছিলেন ৯ উইকেট। তবে ওয়ানডে ফরম্যাটটা ঠিক পড়তে পারেননি বোধ হয় এতদিন। তিন ম্যাচে ১১ ওভার বল করে উইকেট পাচ্ছিলেন না একটিও।
সে খরাটাই ঘুচল এসে গত রবিবার। স্মৃতি মান্ধানার উইকেট দিয়ে খাতা খুললেন ওয়ানডে উইকেটের। এরপর আরেক ওপেনার প্রিয়া পুনিয়াকে ফিরিয়ে ভারতকে দিলেন ধাক্কা। সে ধাক্কা সামলে ভারত যখন জয়ের পথে একটু একটু করে এগোচ্ছে, তখনই তার জোড়া আঘাত। আমানজত কর আর স্নেহ রানাকে সাজঘরের পথ দেখিয়ে দিলেন যখন, বাংলাদেশের জয়টা তখনই হয়ে গেছে সময়ের ব্যাপার মাত্র।
টপ অর্ডার নির্ভর ভারতকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজটা তিনিই করেছিলেন। গড়ে ফেলেছিলেন ইতিহাসও। নারী ক্রিকেটে বাংলাদেশি কোনো পেসার ৪ উইকেট নিয়েছেন, তার নজির যে ছিল না কোনো কালেই! ২৯ রানে তার ৪ উইকেটই এখন বাংলাদেশি কোনো পেসারের পক্ষে সেরা বোলিং। তার গড়ে দেওয়া পথে দল পেল স্মরণীয় এক জয়। ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা আর তার হাত ছাড়া উঠবে কার হাতে?
উঠল, সঙ্গে জুটল গুরু-সতীর্থদের প্রশংসাও। অধিনায়ক নিগার সুলতানা জানালেন, ইতোমধ্যেই তার ভরসা হয়ে উঠছেন মারুফা। কেন? বললেন, ‘মারুফা এমন একজন বোলার যে নতুন বলেও আপনাকে ভালো বল করে দেবে, মিডল ওভারে তো দেবেই। ও আসলে ওর বোলিং নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করে না। সবসময় ভাবে যে, আমি আমার জায়গামতো বল করব। দলের যে প্রয়োজন থাকে, সে সেটাই করতে চেষ্টা করে। সে তার শক্তির জায়গাটাতেই ভরসা করে সবসময়। যেটা আমাকে অনেক বেশি সাহায্য করে। নতুন বলে ওর দেখবেন ন্যাচারাল ইনসুইং আসে। যেটা আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যাটারদের ঝামেলায় ফেলে দেয়।’ কোচ হাশান তিলকরত্নে তো বলেই দিলেন, মারুফা এখন বিশ্বসেরাদেরও একজন।
এই যে অধিনায়কের ভরসা হয়ে যাওয়া, কোচের চোখে তুরুপের তাস, বিশ্বসেরাদের একজন বনে যাওয়া- সব ক্যারিয়ারের শুরুতেই। মারুফা যে কেবল সামনেই এগোতে চাইবেন এখান থেকে, তা আর বলতে!