ছিল না কর্মী, ছিল না পোস্টার তবুও চমক দেখালেন স্বতন্ত্র প্রার্থী!
সাদাকালো নিউজ
মো. শাহজাহান মিয়া। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে থেকে চমক দেখিয়েছেন তিনি। এই নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী শাহজাহান মিয়ার ছিলো না কোনো কর্মী, ছিল না লিফলেট কিংবা পোস্টার। নিজের সাইকেলে করে একা একা প্রচার চালিয়ে ভোটারদের মন জয় করেছেন তিনি। পেয়েছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট।
নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই সিলেট জুড়ে এখন শাহজাহান মিয়াকে নিয়ে আলোচনা। যারা তাকে কোনোদিন দেখেননি তারাও তার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে আলোচনা করছেন। জানতে চাচ্ছেন কে এই শাহজাহান মিয়া? কিভাবে নির্বাচনে হেরেও গরীবের মেয়র নির্বাচিত হলেন?
সিলেট সিটি নির্বাচনে বেসরকারিভাবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯১ ভোট। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল পেয়েছেন ৫০ হাজার ৮৬২ ভোট। আর শাহজাহান মিয়া বাস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৬৮৮ ভোট। তার এই বিপুল সংখ্যক ভোট প্রাপ্তি বিস্মিত করেছে সবাইকে।
জানা গেছে, শাহজাহান মিয়ার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলায়। ২০০২ সালে অভাবের তাড়নায় সিলেটে চলে আসেন তিনি। এরপর নগরের কানিশাইল এলাকার একটি ছাপড়া রেস্টুরেন্টে টেবিল ধোয়া-মোছার চাকরি নেন। ওঠেন নগরের দরগাহ মহল্লার একটি ভাড়া বাড়িতে।
লেখাপড়ার প্রতিও আগ্রহ ছিলো শাহজাহান মিয়ার। তাই কাজের পাশাপাশি ভর্তি হন নগরের ভোলানন্দ নৈশ উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর ময়মনসিংহ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। আর ২০১৮ সালে সিলেটের মদন মোহন কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন অধম্য এই তরুণ।
জানা যায়, সিলেটের প্রায় ৮০টির মতো রেস্টুরেন্টে কাজ করেছেন শাহজাহান। এরপর কিছু টাকা জমিয়ে মোমবাতি ও স্যালাইন বিক্রির কাজ শুরু করেন। তারপর সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি নেন। বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ সাপ্লাই দেন। নিজের একটা ফার্মেসিও ছিল, তবে এখন আর সেটা নেই।
নিজেরই নুন আনতে পান্তা ফুরায়, তবু মানুষের সেবায় সবসময়ই নিবেদিত ছিলেন শাহজাহান। কানিশাইল এলাকায় ফ্রি চিকিৎসাকেন্দ্র খুলে গরিব শ্রমজীবীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন। কোচিং সেন্টার খুলে গরীব বাচ্চাদের ফ্রি পড়িয়েছেন। এমনকি করোনার সময় ২০০ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
সিলেট নির্বাচনে স্থানীয় অনেকেই নিজের টাকা খরচ করে শাহজাহানকে পোস্টার ও প্রচারপত্র ছাপিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্ত সেই পোস্টার লাগানোর মত কর্মীও ছিল না তার। ফলে প্রচারের মাঝে মাঝে তিনি নিজেই নিজের পোস্টার সাঁটাতেন। এমনকি নগরীর কোথাও তার নিজের নির্বাচনী কোনো ক্যাম্প ছিল না। ১৯০টি কেন্দ্রের কোনো বুথেই তার কোনো এজেন্টও ছিল না। তার একমাত্র সম্বল ছিল সাইকেল।
স্থানীয় কয়েকজন ভোটার বলেন, সহজ-সরল শাহজাহানের কথা এবং তার একনিষ্ঠতার কারণে মানুষ তাকে ভোট দিয়েছে। তিনি যাদের কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন তারাও তাকে আপন ভেবে ভোট দিয়েছে। ভোটে না জিতলেও তিনি গরীবের মেয়র।
নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে শাহজাহান মিয়া জানান, তিনি যখন সিলেট শহরে আসেন তখন মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখে স্বপ্ন বুনেন, একদিন এই শহরের জনপ্রতিনিধি হবেন। সেই আশা থেকেই প্রার্থী হয়েছিলেন।