যেভাবে রাজনৈতিক কৌশলে অপশক্তিকে পরাজিত করছেন শেখ হাসিনা
সাদাকালো নিউজ
শেখ হাসিনা- বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে এক বিস্ময়ের নাম। অথচ তিনি নিজে হয়তো ভাবেনওনি–আওয়ামী লীগের সভাপতি হবেন। কিংবা কখনো আসবেন রাজনীতিতে।
শিক্ষাজীবনে ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। নির্বাচিত হন কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভানেত্রীও। কাছ থেকে দেখেছেন পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন। দেখেছেন পিতার জেল-জুলুম-অত্যাচার-মামলা উপেক্ষা করে– বাংলার দুঃখী মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর সংগ্রাম। কিন্তু একদিন তাকেও সেই রাজনীতির পিচ্ছিল পথে হাঁটতে হবে, সেটা হয়তো ভাবনাতেও ছিল না শেখ হাসিনার। অথচ হয়েছে তাই।
১৯৮১ থেকে ২০২১। চার দশকের এই পথপরিক্রমা—শেখ হাসিনাকে নিয়ে গেছে নতুন উচ্চতায়। তবে এই যাত্রাপথে ফুলের চেয়ে কাঁটা ছিল বেশি। পেরিয়েছেন অনেক চড়াই-উৎরাই। এখনও তিনি দলের সভাপতি, নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশকে।
সাল ১৯৮১। বাধ্যতামূলক নির্বাসনে শেখ হাসিনা। দেশের রাজনীতি চরম অনিশ্চয়তার মুখে। জাতির পতাকা ‘খামচে ধরেছে পুরনো শকুন’। এমন এক পরিস্থিতিতে ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি হয় আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। এতে দলের ঐক্য ধরে রাখতে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
১৯৮১ সালের বৃষ্টিস্নাত ১৭ মে। শেখ হাসিনাকে বরণ করতে জনতার ঢল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হারিয়ে দুফোঁটা চোখের জল ফেলতে পারেননি যারা, ১৭ই মে অকাতরে তাদের চোখে জল।
শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান ঢাকার মাটি স্পর্শ করে। আকাশ ভেঙে নামে ঝুম বৃষ্টি। বিমান থেকে মাটিতে নেমে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শেখ হাসিনা। একদিকে আকাশের কান্না, আর একদিকে শেখ হাসিনার। দুইয়ে মিলে তৈরি হয় গ্লানি মোচনের এক বিশেষ মুহূর্ত।
শেখ হাসিনার দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসে পরিবর্তনের অভিঘাত। সম্ভাবনা তৈরি হয় মুক্তিযুদ্ধের হারানো চেতনাকে ফিরিয়ে আনার।
শেখ হাসিনার রাজনীতির শুরুতে ছিল জীবনের ঝুঁকি। ছিল স্বৈর শাসকের লালচোখ। সেসব উপেক্ষা করে রাজনীতিতে নতুন ইতিহাস গড়ার কারিগর হতে আত্মনিয়োগ করলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। ধরলেন নৌকার হাল।
শেখ হাসিনা বাবার মতো রাজনীতিতে সাফল্য দেখাতে পারবেন কি না– তা নিয়ে অনেকেরই ছিল সংশয়। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই শেখ হাসিনা নিজের সামর্থের প্রমাণ দেন। তার ধমনীতে যে শেখ মুজিবের রক্ত! পরাজয় মানতে জানেন না।
পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে একটি বার্তা ছড়ানো হয়। বাংলাদেশে মুজিব হত্যার বিচার হবে না। আর কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারীদের বিচার হওয়াও সম্ভব নয়।
এসবই ভুল প্রমাণ করেছেন শেখ হাসিনা। তার রাজনৈতিক কৌশলের কাছে পরাজিত অপশক্তি। তবে, কাজটি সহজ ছিল না, এখনও নয়। ঘরে-বাইরে বৈরিতা ছিল এবং আছে। সব মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। দেশ এগোচ্ছে। এই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী শুধুই শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন এনেছেন শেখ হাসিনা। তৈরি করেছেন অনেক নতুন রেকর্ড। রাজনীতিবিদরা সাধারণত ফাঁকা বুলিতে অভ্যস্ত। ক্ষমতার বাইরে থাকতে এক কথা, ক্ষমতায় গেলে ভিন্ন।
শেখ হাসিনা এখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। তিনি যা বলেন, তাই করেন। তাঁকে চাপ দিয়ে, আন্দোলনের নামে সহিংসতা চালিয়ে নমনীয় করা যায়নি, যায় না।
শেখ হাসিনা যেটা ঠিক মনে করেন, সেটাই করেন। যা যা করা প্রয়োজন, পদক্ষেপ নিতে পিছপা হন না। এজন্য তাকে কখনও কখনও হতে হয় কৌশলী। অপেক্ষা করতে হয়, সময় ও সুযোগের। এতে অনেকের মনেই তৈরি হয় সংশয়ও। তবে, শেষপর্যন্ত শেখ হাসিনা তার নিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দৃঢ়তা দেখাতে ভোলেন না। এতে কেউ খুশি হয়, অনেকে হয়তো হননা। তবে শেখ হাসিনার চিন্তায় দেশ আর দেশের মানুষ। তাই তার সব সিদ্ধান্ত দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। কোন ব্যক্তিকে খুশি করার জন্য নয়।
দলকে চারবার দেশের ক্ষমতায় এনেছেন শেখ হাসিনা। তিনিই পারেন এবং পারবেন সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে। কারণ, নামটি শেখ হাসিনা। দায়িত্ব পালনে এক ক্লান্তিহীন যোদ্ধা।