ভোলার গ্যাসে স্বস্তি ফিরবে শিল্পে
সাদাকালো নিউজ
চলতি বছরের মে অথবা জুনে ভোলা থেকে গ্যাস পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)।
প্রাথমিকভাবে এই গ্যাস সিএনজি আকারে বা দীর্ঘ মেয়াদে পাইপলাইনের মাধ্যমে আনার পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। শিল্প প্রতিষ্ঠানে এই গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এতে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের শিল্প কারখানাগুলোতে স্বস্তি ফিরবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) মো. কামরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভোলা থেকে প্রাথমিকভাবে সিএনজি আকারে ও দীর্ঘ মেয়াদে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস বরিশাল হয়ে খুলনা নিয়ে আসা হবে। ইতোমধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ হয়েছে। এটি এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আর সিএনজি আকারে নিয়ে আসার প্রস্তাব এই মাসে অনুমোদন হয়ে গেলে দুই মাস লাগতে পারে অবকাঠামো নির্মাণে। সে হিসেবে প্রথম ধাপের গ্যাস আমরা মে-জুন মাসেই পেতে পারি।’
বাপেক্স জানায়, বর্তমানে ভোলার শাহবাজপুর ও বোরহান উদ্দিনে মোট পাঁচটি কূপে ১২০ মিলিয়ন ঘন ফুট গ্যাস আছে। টবগি কূপ থেকে আরও ২০ মিলিয়ন যোগ হলে মোট ১৪০ থেকে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। ভোলা নর্থে ১ নম্বর কূপ থেকে ২০ থেকে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন করতে পারে, ভোলা নর্থ-২ থেকেও ২০ মিলিয়নের মতো গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। ৩ নম্বর কূপ খনন করা হবে ইলিশাতে। এটাতেও ২০ মিলিয়নের মতো পাওয়া যাবে বলে আশা করছে বাপেক্স।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ভোলার শাহবাজপুর ও বোরহানউদ্দিন গ্যাসক্ষেত্রে মজুতের পরিমাণ ছিল দেড় টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট)। ভোলা নর্থ আর ইলিশার গ্যাস যুক্ত করে ভোলায় প্রায় দুই টিসিএফ এর মতো গ্যাসের মজুত আছে বলে আমরা বলতে পারি। এরমধ্যে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পরেও ৭০ থেকে ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস অব্যবহৃত থেকে যায়। যা পাইপলাইন না থাকার কারণে ভোলার বাইরে নেয়া সম্ভব হয়নি এতদিন। এখন এটি সরকার সিএনজি আকারে বা পাইপলাইনের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া করছে।’
প্রসঙ্গত, ভোলা থেকে সিএনজি আকারে গ্যাস ব্যবহার করতে মূলত ‘ক্যাসকেড’ পদ্ধতির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ক্যাসকেড হচ্ছে উচ্চচাপের গ্যাস সিলিন্ডার স্টোরেজ সিস্টেম, যেখানে অনেকগুলো ছোট ছোট সিলিন্ডার থাকে। কম্প্রেসার দিয়ে সেগুলো রিফিল করে অন্য এলাকায় পরিবহন করা হয়। এরপর সেই গ্যাস বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ করা হয়।
পেট্রোবাংলা জানায়, ভোলা থেকে গ্যাস আনতে বেশ কয়েকটি কোম্পানি প্রস্তাব দিয়েছিল। এরমধ্যে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেড জার্মানির লিন্ডে পিএলসির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রতিদিন ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সিএনজিতে রূপান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে। এর পাশাপাশি পার্কার বাংলাদেশ লিমিটেড ২৩ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ঘনফুট, হাওলাদার বাংলাদেশ লিমিটেড ২৬ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন এবং সুপার গ্যাস লিমিটেড ৪ মিলিয়ন গ্যাস সিএনজিতে রূপান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে।
সিএনজি আকারে গ্যাস আনার এই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) মো. কামরুজ্জামানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এখন গ্যাসের দাম নিয়ে আগ্রহী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে নেগোসিয়েশন করছে বলে জানা যায়। এরমধ্যে ইন্ট্রাকোর নামই বেশি শোনা যাচ্ছে। ক্যাসকেড সিলিন্ডার দিয়ে প্রাথমিকভাবে পাঁচ মিলিয়ন ঘনফুট এবং পরে আরও ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিল্প প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা যেতে পারে বলে এই কমিটি সুপারিশ করেছে।