ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় দেহ নেননি বাবা, শায়িত করলেন সহপাঠীরা !
সাদাকালো নিউজ
জুয়েল শীল। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর নাম রাখেন সাঈদ আব্দুল্লাহ। বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হেতালিয়া পাড়ায়। তার বাবার নাম বিধু কুমার শীল। আর মায়ের নাম রানী শীল।
দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সাঈদ। বিষয়টি জানতে পেরে তার পরিবার তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। পরে তার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে।
সাইদ এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন চকরিয়া গ্রামার স্কুলে। এরপর ঢাকায় এসে ভর্তি হন তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজে। টিউশনি করে সেই টাকা দিয়ে পড়াশোনা চালাতেন সাঈদ। এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে তিনি অপেক্ষায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু ট্রেনের ধাক্কায় অবসান হয়েছে তার জীবন সংগ্রামের লড়াই।
গেল বুধবার তেজগাঁও রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন সাঈদ। এ সময় কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা জানান তিনি আর নেই।
তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজের মেধাবী এই ছাত্রের দেহ গ্রহণ করেননি তার বাবা বিধু কুমার শীল। তবে পুলিশের সহায়তায় সহপাঠীরা সাইদের দেহ গ্রহণ করে বাড্ডায় শায়িত করেছে।
কক্সবাজারের পশ্চিম কোনাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল হক জানান, সাইদের দুনিয়া ছাড়ার খবর শুনে তার বাবা-মাকে দেহ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করতে এলাকাবাসীর পক্ষে আমরা গিয়েছিলাম। কিন্তু তার বাবা দেহ গ্রহণ করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
সাঈদ আবদুল্লাহর বন্ধু আবদুল্লাহ নোমান জানিয়েছেন, সাঈদ অনেক কষ্ট করে চলত। কিন্তু কারো কাছে কিছু খুলে বলত না। পরিবার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও সাঈদ তার মায়ের সঙ্গে গোপনে দেখা করত। আমাকে সে বলেছিল, এইচএসসির রেজাল্ট দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগেই বাড়িতে গিয়ে গোপনে মায়ের সঙ্গে আবার দেখা করবে। তার সে আশা আর পূরণ হলো না।
সাঈদের স্মৃতিচারণা করে আবদুল্লাহ জানান, সুযোগ পেলেই তারা দুজনে একসঙ্গে বসে গল্প করতেন। কলেজ চলাকালে সাঈদ আর তিনি এক টেবিলে খেতেন। সাঈদ অত্যন্ত ভদ্র ও মেধাবী ছিলেন। ফুটবলও ভালো খেলতেন।
চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, সাঈদের বাবা দেহ নেবেন না বলে লিখিত দিয়েছেন। বিষয়টি তেজগাঁও থানায় জানানো হয়। পরে তেজগাঁও পুলিশ ঢাকা বিজ্ঞান কলেজের সহপাঠীদের কাছে সাইদের দেহ হস্তান্তর করে।