জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
সাদাকালো নিউজ
বার বার হোঁচট খেয়েছেন, ব্যর্থতাও ছিল পদে পদে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে সফল এক নারীর নাম ইসরাত জাহান। পড়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে, নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এখন তিনি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
ময়মনসিংহের মেয়ে ইসরাত জাহান। আর দশজনের মতো তিনিও স্বপ্ন দেখেছিলেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অপেক্ষমান তালিকায় নামও এসেছিল তার। তবে সুযোগ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন অধরায় রয়ে যায়।
এক পর্যায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হন ইসরাত। ইংরেজিতে তেমন দক্ষতা না থাকলেও, এই বিভাগেই ভর্তি হন। ক্লাস শুরু হতে হতে অনেক দেরি হয়ে যায়। এর মধ্যে আবার পড়ে যান সেশনজটে।
স্নাতকের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে যখন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ইশরাত, তখন এক বন্ধুর সঙ্গে কথা হয় তার। সেই বন্ধুই তাকে ভিনদেশে উচ্চশিক্ষা নেয়ার কথা জানায়। পরে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে স্নাতক পরীক্ষা শেষ করেন ইসরাত। এরপর শুরু করেন বিদেশে পড়তে যাওয়ার প্রস্তুতি।
ইংরেজি বলতে ভীষণ ভয় পাওয়া মেয়েটি প্রথমবারের মতো জিআরই পরীক্ষায় অংশ নেন। তবে ভালো স্কোর করতে পারেননি। তবুও দমে যাননি ইসরাত। দ্বিতীয়বারের মতো ফের শুরু করেন পড়ালেখা। এর মধ্যে উচ্চশিক্ষাবিষয়ক বেশ কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপের সঙ্গেও যুক্ত হন।
সবকিছু ঘাটাঘাটি করে ইশরাত বুঝতে পারলেন ইংরেজিতে পড়ে কোন কোন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেয়া যায়, যোগ্যতা কী কী লাগে, আবেদনপত্র দেয়ার শেষ সময় কবে, কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবেন। সবকিছু বিশ্লেষণ করে এরপর আবেদন করেন তিনি।
ইসরাত জাহান বলেন, হঠাৎ করে একদিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেমফিস থেকে ই–মেইল পেলাম, আমি সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। সেদিনের অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়ে শুরুতে বেশ হিমশিম খেতে হয় ইসরাতকে। তিনি বলেন, শুরুর দিকে মনে হচ্ছিল, দেশটিতে সবকিছুর সময়সীমা খুব কম। তবে ভালো দিক হলো, শিক্ষকরা ভীষণ আন্তরিক। তারা সবসময় সহযোগীতা করতেন।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন ইসরাত। স্নাতকোত্তরে বাংলাদেশে নারী স্বাস্থ্য ও বৈষম্য নিয়ে গবেষণা করেছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ইউনিভার্সিটি অব মেমফিসে সোশিওলজি বিভাগে অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেছেন ইশরাত।
ইশরাত জাহান বলেন, দেশে সুযোগের অভাবে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাইনি, কিন্তু পড়ার আগ্রহ থেকে সরে যাইনি। এ বছর পিএইচডি গবেষণা শুরু করব। বাংলাদেশের নারীদের স্বাস্থ্য উন্নয়নে কীভাবে আরও কার্যকর উপায় বের করা যায়-সেটিই হবে আমার গবেষণার বিষয়।