২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে ৩ প্রশ্নের জবাব চায় সানেম
সাদাকালো নিউজ
জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ জানাতে শনিবার, ৮ জুন ২০২৪ তারিখে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ব্র্যাক সেন্টার ইনে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিং (সানেম)। সংবাদ সম্মেলনে সানেমের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন সানেমের গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড সায়েমা হক বিদিশা। সভাপতিত্ব করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড সেলিম রায়হান।
শুরুতেই ড সেলিম রায়হান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ৩ টি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর প্রয়োজন। প্রথম প্রশ্ন, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতি সম্পর্কে যথাযথ বোঝাপড়া আমাদের আছে কিনা ও তার প্রতিফলন বাজেটে আছে কিনা। দ্বিতীয় প্রশ্ন, প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেগুলো এই সংকট কাটাতে কতোটা সক্ষম? এবং তৃতীয় প্রশ্ন, আসলে কি করা উচিত ছিলো? তিনি বলেন, সানেমের প্রেজেন্টেশনে এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনা করে সানেমের গবেষণা পরিচালক ড সায়েমা হক বিদিশা বলেন, বর্তমানে অর্থনীতির বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এরমধ্যে সবার আগে রয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এর পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতির বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে- বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের নেতিবাচক প্রবণতা ও সার্বিক ভাবে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমাণ। পাশাপাশি রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে স্থবিরতা তৈরী হয়েছে, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও বৈষম্য কমানো এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার চ্যালেঞ্জও আমাদের সামনে রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসাটা মূখ্য চ্যালেঞ্জ। গত কয়েক মাস ধরে টানা মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন আমরা দেখছি। গত বছরের তুলনায় বাজেটের হার ৫ শতাংশের মতো বেড়েছে। বাজেটের আকার ও ঘাটতি কিছুটা ছোট রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। কিছু জায়গায় কৃচ্ছতাসাধনের চেষ্টা আমরা দেখেছ। একটি ভালো উদ্যোগ হচ্ছে, ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে উৎস কর কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে কমিয়ে আনা হয়েছে। যার কিছুটা সুফল দেখতে পারবো বলে আমরা আশা করছি। এর বাইরে ফ্যামিলি কার্ড, রেশন, ওএমএস প্রোগ্রামের মাধ্যমে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা যথেষ্ট কিনা সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতো। আমরা মনে করি সামষ্টিক অর্থনীতির পরিস্থিতি ও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে বাজেটের আকার আরেকটু ছোট করা যেতো। যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা এবারও রয়েছে যা মূল্যস্ফীতিকে আরো উস্কে দেয়। বাজেটের ঘাটতিকে আরো কমিয়ে, অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন কমিয়ে সাধারণ মানুষকে মূলস্ফীতির চাপ থেকে রক্ষা করার সুযোগ ছিলো। মূল্য সংযোজন কর আরো কমানো যেতো। মুসক একটি পরোক্ষ কর যার চাপ সবার উপরে সমান ভাবে পরে। এটা কমিয়ে প্রত্যক্ষ করের জালের আওতা বৃদ্ধি করে সেই ঘাটতি পূরণ করার সুযোগ ছিলো। প্রতি বছরই আমরা লক্ষ্য করছি, কর হারের দিকে যতোটা নজর দেয়া হচ্ছে, কর জালের আওতা বৃদ্ধির ব্যাপারে ততোটা নজর দেয়া হচ্ছে না। সেকারণেই প্রতি বছর দেখা যাচ্ছে, বাজেটের ঘাটতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য অর্থায়ন করা হচ্ছে যার নেতিবাচক প্রভাব সার্বিক ভাবে অর্থনীতির উপর পরছে। করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর পদক্ষেপ মধ্যবিত্তকে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারতো যা আমরা দেখিনি। সার্বিক ভাবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে মূল্যস্ফীতি নামিয়ে আনার জন্য পর্যাপ্ত পদক্ষেপ আমরা বাজেটে দেখিনি।
সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন কমে ২৫ বিলিয়ন ডলার মতো রয়েছে। যা বিভিন্ন দায় বিবেচনা করলে ২০ বিলিয়ন ডলারের কম। এই রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ জরুরী। দীর্ঘদিন ধরে ডলারের দাম যে ধরে রাখা হয়েছিলো তার প্রভাব বাজারে ভালো হয়নি। এখন হঠাৎ করে ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে অর্থনীতি চাপে পড়েছে। এক্ষেত্রে গত বাজেটে যা ছিলো তারই একটি ধারাবাহিকতা আমরা দেখেছি। রপ্তানীতে আমরা যেসব প্রণোদনা দেই তা আরো বিচার-বিবেচনা করে দেয়া জরুরি। কোন কোন রপ্তানী কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে তা বিবেচনায় রাখা উচিত। কেননা আমাদের রপ্তানী আয় বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। বৈদেশিক বিনিয়োগের সাথে আমাদের ব্যবসা করার সার্বিক পরিবেশ জড়িত। বৈদেশিক বিনিয়োগে আমরা বড় ধরণের কোন উল্লম্ফন দেখছি না। সেই জায়গায় কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিলো যা প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা দেখছি না। রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে, যতোক্ষণ পর্যন্ত খোলা বাজারের সাথে ব্যাংক রেটের পার্থক্য থাকবে ততোক্ষণ পর্যন্ত হুন্ডির প্রবণতা মানুষের মধ্যে থাকবেই। তবে দীর্ঘমেয়াদে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য হুন্ডি ও কালো টাকার সার্কুলেশনের ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমদানি করা পণ্যের মধ্যে খাদ্যপণ্যগুলো স্থানীয় ভাবে উৎপাদন করার জন্য কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদে সুফল বয়ে আনবে।
কর্মসংস্থান তৈরীতে সুনির্দিষ্ট সুচিন্তিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। বাজেটে কর্মসংস্থান তৈরীতে বড় ধরনের কোন উদ্যোগ আমরা লক্ষ্য করিনি। কর্মসংস্থান উজ্জীবিত করতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। শ্রমঘন শিল্পগুলোতে বিনিয়োগ ও নতুন শ্রমঘন শিল্প তৈরী করা এবং তাদেরকে সহযোগিতা দেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পে ছোট ছোট প্রণোদনা দেয়া কার্যকর হতো তবে সে জায়গায় তেমন উদ্যোগ আমরা লক্ষ্য করিনি। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতেও উদ্যোগ প্রয়োজন ছিলো। সেক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোন উদ্যোগ আমরা দেখিনি। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষণীয়, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১৭ শতাংশ বরাদ্দ থাকলেও যদি পেনশন, বৃত্তি ও সঞ্চয়পত্রের সুদ বাদ দিলে তা ১১ শতাংশে দাঁড়ায়। আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ক্যাটাগোরাইজেশন ঠিকভাবে করে মূল সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। বর্তমান মূল্যস্ফীতির চাপ বিবেচনায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। টিসিবিতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। টিসিবির পণ্যের সংখ্যা ও পরিমাণ বাড়ানো জরুরি। শহুরে দরিদ্র্য দের জন্য উদ্যোগ নেয়া দরকার ছিলো। অসমতার ক্ষেত্রে বলতে হয়, আমাদের বৈষম্য বেড়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতে অন্তত ১ বছরের জন্য বরাদ্দ ১১ শতাংশ করা প্রয়োজন। বাজেটে অবকাঠামোগত উন্নয়নে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তার বদলে স্বাস্থ্য খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে জোর দেয়া উচিত। কৃষিখাত আমাদেরকে অর্থনীতির নানা ঝামেলা থেকে নিয়মিত সুরক্ষা দিয়ে আসছে তবে বাজেটে ৩ থেকে ৪ শতাংশের বেশি বরাদ্দ দেয়া হয় না, আমরা জোর দিতে চাই কৃষি উদ্ভাবন ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি শক্তভাবে ঠেকাতে তাদের আরো সক্ষম করে তুলতে। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য কোন পদক্ষেপ বাজেটে নেই। আমাদের পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনা দরকার।
ড সেলিম রায়হান মূল্যস্ফীতি না কমার কারণ সম্পর্কে তার মন্তব্যে বলেন, মুল্যস্ফীতি কমানোর প্রচলিত যেই পদ্ধতি অর্থাৎ মূদ্রানীতি, সেটি মূল্যস্ফীতি কমাতে সম্পূর্ণ কার্যকর হচ্ছে না। যে মুহূর্তে উপলব্ধি হল যে নির্দিষ্ট সুদের হার অর্থাৎ ৬-৯ নীতি কার্যকর নয় তখন চেষ্টা করা হলো বাজারভিত্তিক সুদের হার নেয়ার। তারপরও এই পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না কেন? এটির একটি কারণ হচ্ছে নীতিটি অনেক বেশি দেরি করে নেয়া হয়েছে। সংকোচনমূলক মূদ্রানীতি গ্রহণের মূল কারণ হল সার্বিক চাহিদা কমিয়ে আনা। তবে দেরি করে নীতি নেয়ার কারণ তা অনেকটা কমে গিয়েছিল। এই মুহূর্তে আরো বেশি সুদের হারের পরিবর্তন করলে আর্থিক খাতে ধ্বস নামবে। সুতরাং সঠিক সময়ে নীতি না নেয়ায় এই সুদের হার বাড়ানো কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে। আরেকটি প্রশ্ন রয়ে যায় ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ এর জন্য যা করা হয়েছে তা কতটা বাস্তবসম্মত? আমাদের আর্থিক ও মূদ্রা নীতির সমন্বয়ের সমস্যা রয়েছে। বাজারে হঠাৎ করে অযৌক্তিক দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। এরকম প্রতিযোগিতা বিরোধী কাজের পরেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না। বাজেটের উদ্দেশ্য সৎ হলেও কোন সমন্বয় নেই।
দ্বিতীয় জায়গাটি হচ্ছে- রাজস্ব আদায়ে যেখানে প্রত্যক্ষ করে গুরুত্ব দেয়া দরকার ছিল সেখানে পরোক্ষ করে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, কারণ সেটা করা তুলনামূলক সহজ। অন্যদিকে অতি ধনীদের থেকে যদি কর আদায় করতে না পারি তাহলে কর ন্যায্য হবে না। কালো টাকা সাদাকরণে ১৫% করের ব্যাপারেও তীব্র নিন্দা জানাই। সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া উচিত এবং আশা করি পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে এটি বাদ যাবে। সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্যের ক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের ঝাঁকুনি হয়েছে এবং এখনো ভারসাম্য আসেনি। আমাদের ঘাড়ে আগামীতে ঋণের বোঝা আরো বাড়বে। ঋণ নিয়ে যেই মেগা প্রকল্প করা হয়েছে সেগুলোর যথাযথ মূল্যায়ন করা দরকার। ঋণ পরিশোধের সময়ও কম দেয়া হয়। আমাদের কিন্তু বৈদেশিক মূদ্রাতেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। অন্যদিকে ঋণ খেলাপির পরিমাণ বাড়ছে ব্যাংকে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা কেন ব্যবস্থা নিতে পারছি না? প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কোনকিছুর সাথেই বাজেটের সাদৃশ্য দেখা যাচ্ছে না। সরকার স্ববিরোধীতা করছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন এতো বছরেও স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট বাড়ানো হচ্ছে না? আমাদের জ্বালানী খাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানীতে রূপান্তরের যেই পাথওয়ে রয়েছে সেটি এখনো বাজেটে সুনির্দিষ্ট না।
সানেমের পক্ষ থেকে আমরা প্রস্তাব করছি যে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য ২ বছরের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা থাকা দরকার যাতে ব্যবসার আস্থা ও প্রাইভেট সেক্টরের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থা বাড়ে। এছাড়াও ব্যাংকে আমরা যারা ডিপোজিট করছি তারা যেন আস্থা ফিরে পাই। এছাড়াও দুর্নীতির ক্ষেত্রে যথাযথ তদন্ত এবং সংসদীয় কমিটি করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ। দুর্নীতির বোঝা বহন করতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের। দুর্নীতির জায়গায় আমরা জিরো টলারেন্স দেখতে চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে ড বিদিশা বলেন, রেমিটেন্স দাতাদের জন্য আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি অনার্থিক প্রণোদনার প্রয়োজন। সামাজিক স্বীকৃতির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেমন- তাদের জন্য বিমানবন্দরে আলাদা সুবিধার ব্যবস্থা করা, তাদের গ্রামে যেয়ে তাদের একটি বিশেষ স্বীকৃতি প্রদানসহ নানারকম অনার্থিক প্রণোদনা দেয়া সম্ভব।
অন্যদিকে, কার্যকরী ব্যয়ের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন ক্ষেত্রে ২২% বরাদ্দের প্রয়োজন কতটুকু? নানাধরণের বিলাসবহুল বিষয় অর্থাৎ বিলাসদ্রব্য, আমদানি দ্রব্য, বিদেশ ভ্রমণ, আপ্যায়ন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে সাধারণ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের স্বস্তি ও তাদের সুবিধার ক্ষেত্রে বেশি জোর দেয়া প্রয়োজন।
ডলারের বিপরীতে টাকার মান প্রসঙ্গে ড সেলিম রায়হান বলেন, ক্রলিং পেগকে আরো নির্বিঘ্নে কাজ করতে দিতে হবে। যদি প্রশাসনিক এক্সচেঞ্জ রেট রেখে দেয়া হয় বা ব্যান্ডটি পরিষ্কার না করা হয়, সেক্ষেত্রে আস্তে আস্তে বাজারভিত্তিক এক্সচেঞ্জ রেটের দিকে যেতে হবে। যত দেরি হবে, তত বেশি ধাক্কা খেতে হবে অর্থনীতিকে। তাই আমরা জানতে চাই ক্রলিং পেগ ঠিক কতটুকু ক্রল করতে পারে? কালো টাকা সাদাকরণের চেয়েও কীভাবে কালো টাকা হচ্ছে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাচ্ছে কিনা সেই প্রশ্নে বলতে গেলে বলতে হয় ১ বছর আগের তুলনায় সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমরা অনেক অবস্থা অনেক খারাপ হয়েছে। আগামী বছরগুলোতে এই উদ্বেগের মাত্রা আরো বেড়ে যাবে। মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া প্রসঙ্গে ড বিদিশা বলেন, পদক্ষেপটি আমাদের অর্থনীতির দর্শনের নীতিবিরুদ্ধ। এ পদক্ষেপের কারণে যারা সৎভাবে ব্যবসা করবে, তারা নিরুৎসাহিত হবে। প্রশ্নের জবাবে ড সেলিম রায়হান বলেন, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের উপর বোঝা বেড়েই চলেছে। মোবাইল এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, এটির উপর কর বাড়ানোতে নিম্ন আয়ের মানুষের উপর বোঝা বেশি পড়বে। অন্যদিকে, ধনীদের একটা বড় অংশ করের আওতার বাইরে।
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- আমরা বাজেটের বাস্তবায়ন বলতে বুঝি বরাদ্দকৃত অর্থ কতটুকু খরচ করা হয়েছে। যেটি হওয়া উচিৎ, প্রতিটি প্রকল্পের কতটুকু সম্পন্ন হয়েছে। বৈদেশিক রিজার্ভের ক্ষেত্রে পদক্ষেপগুলো স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত নয়। বাজেটের লক্ষ্যমাত্রাগুলো পুরোপুরি বাস্তবসম্পন্ন নয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগগুলো যথেষ্ট নয়। সামনে অর্থবছরের শেষে যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়া হয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো খারাপ হবে। এছাড়াও, বৈদেশিক ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের আরো মনে রাখতে হবে আর কিছুদিনের মধ্যেই আমরা এলডিসি উত্তরণ করবো। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর পাশাপাশি আরো চ্যালেঞ্জ যুক্ত হবে। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগ বহুমুখীকরণের ব্যাপারে জোর দিতে হবে। ২০১০-২০১৯ পর্যন্ত আমাদের একটা সোনালী সময় গিয়েছে। সেসময়েও আমাদের আর্থিক অবস্থা, ব্যাংকিং খাত বিভিন্ন বিষয়ের সমস্যার কথা বলেছি, তবে একটি উর্ধ্বমুখী প্রবৃদ্ধি থাকার কারণে এই বিষয়টি উপেক্ষিত রয়ে গিয়েছে যার ফলাফল আমরা এখন পাচ্ছি। দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, অর্থনীতিকে একটি লাইনে আনতে হবে এবং অর্থনীতির ভিতকে শক্ত করতে হবে। আমরা একটি রেললাইন ট্র্যাকের উপরে চলছিলাম, সেখান থেকে বিচ্যুত হয়ে গিয়েছে অর্থনীতি এবং ভিত শক্ত না করলে আরো সমস্যায় পড়তে হবে। আমাদের মূলত দরকার হচ্ছে সংস্কার- প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। সংস্কারের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দরকার।
বাজেট পর্যবেক্ষণকারী সানেমের গবেষক দলে ছিলেন, সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড সেলিম রায়হান, গবেষণা পরিচালক ড সায়েমা হক বিদিশা, জেষ্ঠ্য গবেষণা সহযোগী ইসরাত হোসাইন, ইশরাত শারমিন, আফিয়া মুবাশশিরা তিয়াশা, গবেষণা সহযোগী খন্দকার ইফফা, সাফা তাসনিম ও গবেষণা সহকারি নাফিসা জামান।