মাঝসমুদ্রে ৩ দিন দুই শিশুকে বাঁচিয়ে নিজে না ফেরার দেশে মা
জহুরা প্রিতু
চারদিকে সমুদ্রে নীল পানি। কূল কিনারা নেই। মাথার ওপর সাদা আকাশ। কূলহীন পানিতে ভেসে আছে জাহাজের ছোট একটি ভাঙা অংশ। সেটা আঁকড়ে আছেন এক সাহসী মা। সাথে দুই শিশু।
টানা তিনদিন লড়াই করলেন সমদ্রের সাথে। শিশুদের বাঁচালেন। কিন্তু নিজে আর বাঁচলেন না। উদ্ধারকারী দল সেখানে পৌঁছালো ঠিকই। কিন্তু ততক্ষণে মায়ের শরীর নিথর। তবুও দুই শিশুকে আঁকড়ে রেখেছেন বাহুডোরে।
এই মায়ের নাম মেরিলি শাকোন। ভেনেজুয়েলার বাসিন্দা। বয়স ৪০ বছর। ৬ বছরের ছেলে, ২ বছরের মেয়ে আর পরিবারের কয়েক জনের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার হিগুয়েরোট থেকে টরটুগা দ্বীপে যাচ্ছিলেন মেরিলি। প্রমোদতরীতে সময় কাটছিল বেশ। ছিল অ্যাডভেঞ্চার আর হইহুল্লোর। তবে সুন্দর কিছু সময়ের পরই যে বিপদ আসবে কে জানতো?
দৈত্যাকৃতি এক ঢেউ এসে ধাক্কা মারে প্রমোদতরীতে। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় সেটি। কোনও মতে একটি অংশকে আঁকড়ে দুই সন্তানকে নিয়ে ভেসে থাকেন মেরিলি। সঙ্গে ছিলেন শিশুদের ২৫ বছরের ন্যানি ভেরোনিকা মার্টিনেজ।
মেরিলি সিদ্ধান্ত নেন, যেভাবে হোক বাচ্চাদের বাঁচাতেই হবে। দুই সন্তানকে ক্রমাগত স্তন্যপান করাতে থাকেন তিনি। আর নিজের শরীরকে ডিহাইড্রেট রাখতে পান করতে থাকেন নিজেরই মূত্র।
৫ সেপ্টেম্বর ফেরার কথা ছিল মেরিলিদের। কিন্তু রাত ১১টা বেজে গেলেও ফেরেননি তাঁরা। তখন ভেনেজুয়েলার ন্যাশনাল মেরিটাইম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই প্রমোদতরী সংস্থা। ৬ সেপ্টেম্বর মেরিলিদের যাত্রাপথে খোঁজ শুরু করে ভেনেজুয়েলার মেরিটাইম বিভাগ।
অনুসন্ধানকারী দলটি লা অর্চিলা দ্বীপের কাছে প্রমোদতরীর ভাঙা অংশ দেখতে পায়। ৭ সেপ্টেম্বর সকালে ওই দ্বীপ থেকে কিছুটা দূরে তাঁরা দেখতে পান প্রমোদতরী আরও একটা ভাঙা অংশ।
উদ্ধারকারীরা সেখানে পৌঁছান। ততোক্ষণে মারা গেছেন মেরিলি। তিন দিন সমুদ্রে নিজের মূত্র পান করে কাটিয়েছিলেন। কিন্তু চতুর্থ দিন আর পারেননি। উদ্ধারকারীরা আসার আগে ডিহাইড্রেশনে মারা যান মেরিলি।
চিকিৎসকরা বলছেন, মেরিলির শরীরে ডিহাইড্রেশনের কারণে ইলেক্ট্রোলাইট কমে যায়। আর এতেই অকার্যকর হয়ে পড়ে তাঁর শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম। শিশু দুইটিকে বুকের দুধ খাইয়ে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন মেরিলি। আর একারণেই তাঁর শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট দ্রুত কমতে শুরু করে ।
মায়ের এই আত্মত্যাগ বৃথা যায় নি। বেঁচে ফিরেছে তাঁর সন্তানরা। তাঁরা এখন হাসপাতালে ভর্তি। ওই ভাঙা অংশের কাছেই অন্য একটি অংশ আঁকড়ে ছিলেন শিশুদের ন্যানি ভেরোনিকা। তাঁকেও উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ এখনো মেলেনি।