বাংলাদেশে আবার ফিরছে নীলগাই
তানজিলা ফাহিম
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে জন্ম নিয়েছে নীলগাইয়ের দুটি শাবক। পয়লা আগস্ট শাবক দুটির জন্ম হয়। তবে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এতোদিন খবরটি চেপে রাখে পার্ক কর্তৃপক্ষ।
দেশে প্রাকৃতিক পরিবেশে বিলুপ্ত প্রাণী নীলগাইয়ের– শাবক জন্ম দেয়ায় আশার আলো দেখছেন প্রাণি গবেষকরা। সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক সারোয়ার হোসেন জানান, গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা এলাকায় একটি স্ত্রী নীলগাই জবাই করার প্রস্তুতি নেন স্থানীয়রা। পরে নীলগাইটি উদ্ধার করে সাফারি পার্কে হস্তান্তর করে বিজিবি।
এর আগের বছর ২২শে জানুয়ারি নওগাঁ জেলা থেকে জবাই এর প্রস্তুতির সময় একটি পুরুষ নীলগাই উদ্ধার করে স্থানীয় প্রশাসন। পরে প্রাণীটিকে রামসাগর জাতীয় উদ্যানে রাখা হয়।
গত বছরের ১৯শে আগস্ট পুরুষ নীলগাইটিকে সাফারি পার্কের স্ত্রী নীলগাইয়ের সঙ্গে রাখা হয়। পরে নিবিড় পর্যবেক্ষণ শেষে প্রাণীটিকে উন্মুক্ত করা হয় পার্কের কোর সাফারি জোনে।
সেখানে জুটি তৈরি হয় নীলগাই দুটির। প্রায় এক বছর পর গত পয়লা আগস্ট দুটি শাবক জন্ম দেয় এই জুটি। তবে শাবক দুটি পুরুষ না স্ত্রী তা জানা যায়নি।
নীলগাই ভারতীয় উপমহাদেশে অ্যান্টিলোপ জাতীয় প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বড়। দেখতে খুব সুন্দর। চেহারা অনেকটা ঘোড়ার মতো। এদের দেহের পেছনের দিক কাঁধ থেকে নিচু। ঘাড়ে বন্য শূকরের কেশরের মতো ঘন লোম।
পুরুষ নীলগাইয়ের শরীরের রং গাঢ় ধূসর, প্রায় কালচে রঙের। আর স্ত্রী নীলগাই ও শাবকের রঙ হয় লালচে বাদামি। শিং আছে পুরুষ নীলগাইয়ের।
তৃণভোজী প্রাণী হিসেবে ঘাস, শস্য ও কাঠ জাতীয় তৃণ খেতে এরা ভালোবাসে। পানি ছাড়া দীর্ঘক্ষণ কাটাতে পারে। এমনকি গরমের দিনেও নীলগাই তেমন পানি পান করে না।
নীলগাই দৌড়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। শক্তিশালী ঘোড়ার পিঠে না চড়ে নীলগাই ধরা প্রায় অসম্ভব। ‘হেমন্ত থেকে শীতকালের শুরুর দিকে এদের প্রজননের সময়। পুরুষ নীলগাই সম্মতিসূচক লেজ নাড়াচাড়ার পর স্ত্রী নীলগাই মিলিত হয়।
নীলগাইয়ের গর্ভধারণকাল ২৪৩ দিন। বেশিরভাগ সময় দুটি শাবকের জন্ম হয়। তবে তিনটি শাবকও হয় মাঝে মাঝে। জন্মের ৪০ মিনিটের মধ্যে দাঁড়াতে পারে শাবক। পুরুষ শাবক তিন বছর ও স্ত্রী শাবক দুই বছরে প্রজননের উপযোগী হয়। এদের গড় আয়ু ২১ বছর।
কর্তৃপক্ষ বলছে, পার্কে জন্ম নেয়া নীলগাইয়ের শাবক দুটি দীর্ঘদিন ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে ছিল। অনেক চেষ্টা করেও তাদের দেখা যায়নি। শাবকগুলো একটু বড় হলে বাইরে আসে। মা ও শাবক দুটিই সুস্থ আছে। তাদের পুষ্টির কথা বিবেচনা করে পার্ক থেকে ঘাস, গাজর, কদমপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে বিলুপ্ত হয় নীলগাই। একদিকে বন কমে যাওয়া, অন্যদিকে স্থানীয়রা নীলগাই জবাই করে খেয়ে ফেলায়—প্রাণিটি বিলুপ্ত হয় প্রকৃতি থেকে। তবে, গত কয়েক বছরে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে কয়েকটি নীলগাই। দীর্ঘদিন পর সাফারি পার্কে জন্ম নেয় এই দুটি নীলগাই— নিঃসন্দেহে দেশের জন্য একটি ভালো খবর।