প্লাস্টিকের রাস্তা তৈরি করে বিশ্বে হৈচৈ ফেলে দিলো পাকিস্তান!
নাফিজা আক্তার
বর্তমান পৃথিবীকে ধ্বংস করার অন্যতম কারণ বলা যেতে পারে প্লাস্টিককে। পৃথিবীর বহু দেশের মতো বাংলাদেশও প্লাস্টিককে বর্জন করতে শুরু করেছে একটু একটু করে। এর বদলে হাতে তুলে নিয়েছে কাগজসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানকে। তবে এর মধ্যে পাকিস্তান অন্যদের থেকে নিজেদেরকে এক ধাপ এগিয়ে রাখলো প্লাস্টিকের রাস্তা বানিয়ে। এমনই এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। সারাদেশের ফেলে দেয়া প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিক পণ্য দিয়ে তৈরি করে ফেললেন আস্ত একটি রাস্তা।
দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদের আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে ‘ওয়ার্ল্ড উইদাউট প্লাস্টিক’ প্রোগ্রামের একটি মেগা প্রকল্পের আওতায় এই রাস্তা তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান কোকাকোলা এই উদ্যেগে পাশে পেয়েছিলো ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি এবং ন্যাশনাল ইনকিউবেশন সেন্টারকে। রাস্তাটি তৈরি করতে তারা ব্যবহার করেছে প্রায় ১০ টন ফেলে দেয়া প্লাস্টিক।
ব্যবহারের পর প্লাস্টিক ফেলে দেয়ায় একদিন রীতি ছিলো। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে প্লাস্টিক পচনশীল নয় সে কারণে তার রিসাইকেল হওয়ায় সম্ভব নয়। তবে এবার সেই প্লাস্টিককে পুনর্ব্যবহার করে অন্যান্য নজির গড়লো পাকিস্তান সরকার।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জানিয়েছেন, এটি এক অন্য ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি। আমি খুব খুশি যে, এই ধরণের কাজে বহু লোক যুক্ত হয়েছেন। অনেক লোক কাজ পেয়েছে এবং সরকারের অর্থ বাঁচিয়েছে। এছাড়াও পরিবেশ রক্ষা হয়েছে।
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, পাকিস্তানে প্রতিবছর ৮৭ হাজার টন বর্জ্য জমা হয় যার মধ্যে ৫০ বিলিয়ন প্ল্যাস্টিক ব্যাগ। যেগুলো যেদিক-সেদিক জমা হয়ে রাস্তার ক্ষতি করে। চাষাবাদি জমি নষ্ট করে। এমনকি ড্রেনেজ লাইনে আটকে গিয়ে পানি চলাচলের সমস্যা তৈরি করে।
কোকাকালা পাকিস্তান ও আফগানিস্তান একত্রিত হয়ে এক নতুন উপায়ে এই রাস্তা তৈরি করে দেখিয়েছে যে, প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার করাও সম্ভব। এই গোটা প্রকল্পতে খরচ হয়েছে ২১ মিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি। প্লাস্টিকের রাস্তাটি তৈরি করার আগে পরীক্ষা করা হয়েছিলো ইসলামাবাদের রাস্তাগুলোর ধরণ ঠিক কী রকম? একটি সম্পূর্ণ রাস্তা তৈরি করতে ঠিক কতটা প্লাস্টিক প্রয়োজন হবে। এর পরই তারা নেমে পরে কাজে।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষের মতে, পরিবেশবান্ধব হওয়ার পাশাপাশি স্থায়িত্ব ও খরচের যথাযথ কার্যকারিতার ক্ষেত্রে একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত এ সড়ক। পুনর্ব্যবহৃত পিইটি বর্জ্যকে একটি চলমান প্লাস্টিক অর্থনীতির অংশ হতে সাহায্য করার পাশাপাশি পরিবেশে যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এটি। প্লাস্টিক-কার্পেটিং করা সড়কগুলো সাধারণ সড়কের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দীর্ঘস্থায়ী এবং ৫১ শতাংশ শক্তিশালী।
২০১৮ সালে কোকাকোলার পক্ষ থেকে গোটা বিশ্বব্যাপী একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিলো। যেখানে তারা আওয়াজ তুলেছিলেন কোনো জিনিস ফেলে দেয়া যাবে না। সেগুলো দিয়েই নতুন জিনিস তৈরি করতে হবে। পাকিস্তান কোকাকোলা সেই পদক্ষেপের নজির গড়লো।