সেদিন যা ঘটেছিলো দুই আসনার সদস্যের মধ্যে !
সাদাকালো নিউজ
নরসিংদীর অগ্রণী ব্যাংকের ভেতর দুই আনসার সদস্যের পরপারে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি। গেল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ব্যাংকটির রায়পুরার রাধাগঞ্জ বাজার শাখার ভবনের দরজা ভেঙে তাদের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা হলেন তৌহিদুল আলম ও রঞ্জু মিয়া। দুজনেই ব্যাংকটির রাত্রিকালীন নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।
২৪ বছর বয়সী তৌহিদুলের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার পূর্ব সদরদী গ্রামে। তার বাবার নাম সিদ্দিক ফকির। আর ৪০ বছর বয়সী রঞ্জু মিয়ার বাড়ি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলার দড়িচন্দ্রবাড়ি গ্রামে। তার বাবার নাম মো. মজিবর রহমান।
ব্যাংকের ভেতরে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, পরপারে যাওয়ার আগে ঘণ্টাখানেক অস্থিরভাবে দুজন পায়চারি করেন। এরপর তারা তাঁদের থাকার কক্ষে ঢুকেন। এরপর আর বের হননি। ব্যাংকের কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে সেই কক্ষ থেকেই দুজনের দেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের দুজনের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে মুখে ফেনা ছিল। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় পরপারে পাড়ি দিয়েছেন তারা। তবে তাঁরা শেষ কোথায় কী খাবার খেয়েছিলেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ব্যাংকের কর্মকর্তা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই দুই আনসার সদস্যের দায়িত্ব ছিল প্রতি রাতে কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করে পাহারা দেওয়া। এর জন্যই তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে তৌহিদুল ছয় মাস ও রঞ্জু চার মাস ধরে এখানে কাজ করছিলেন।
ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, পর্যায়ক্রমে একজন কার্যালয়টির ভেতরে হাঁটাহাঁটি করবেন, এ সময় অন্যজন বিশ্রাম নেবেন। এ জন্য ব্যাংকটির স্টোররুমে বিভিন্ন পুরোনো লেজার ও নথিপত্রের পাশেই একটি চৌকি ছিল। ওই দুই আনসার সদস্য ব্যাংকটির ভেতরের রান্নাঘরে নিজেরাই রান্না করে খেতেন।
ব্যাংকের ভেতরে থাকা সিসিটিভি ফুটেজের বরাত দিয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুই গেটে তালা দিয়ে বাইরে যান তারা। সন্ধ্যা ৭টার পর কাঁচাবাজারভর্তি একটি ব্যাগ নিয়ে আবার তারা ব্যাংকে ঢোকেন। এরপর রান্না ঘরে চলে যান। অল্প সময়ের মধ্যে সেখান থেকে বেরিয়ে কার্যালয়ের ভেতরেই এক ঘণ্টা ধরে অস্থিরভাবে পায়চারি ও সিগারেট খেতে দেখা যায় তাদের। পরে তাঁরা তাঁদের কক্ষে ঢুকে যান।
আনসার সদস্যদের বলা ছিল, যেকোনো সমস্যায় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ফোন করে জানাতে। তারা যে অসুস্থ বোধ করছিলেন, এ খবর ব্যাংকের কাউকে ফোন দিয়ে জানাননি তারা। ধারণা করা হচ্ছে, ওই কক্ষে ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যে শেষ নিঃশ্বাস ছাড়েন তারা। তাদের বিশ্রামের জন্য বরাদ্দ থাকা ওই কক্ষে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় পরে কী হয়েছে, তা জানা যায়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, তারা দুজনেই খুব ভালো লোক ছিলেন। কারও সঙ্গে কখনো কোনো ঝামেলায় জড়াতে দেখা যায়নি। তাদের কাউকে কোনো ধরনের না সেব্য পণ্য সেবন করতেও দেখেননি তারা। সব সময় হাসিমুখে কথা বলতেন।
ঘটনার বিষয়ে নরসিংদীর পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম জানান, দুই আনসার সদস্যের ঘটনাটি রহস্যজনক। অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর সঠিক কারণ জানা যাবে। দ্রুততম সময়ে এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হবে।
