কে এই মিশু হাসান? জীবনযাপনে সৌদি রাজপুত্রদেরও হার মানান তিনি!
সাদাকালো নিউজ ডেস্ক
শারফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান দেড় যুগ আগে ছিলেন ছিঁচকে চোর। সেই মিশুই এখন হাজার কোটি টাকা সম্পদের মালিক।
মিশুর উত্থান যেন কোন থ্রিলার কাহিনী। ছিনতাই থেকে শুরু করে মাদক দ্রব্যের কারবার, অনৈতিক কর্মকাণ্ডের আখড়া হিসেবে পরিচিত পার্টির আয়োজন, দেশে-বিদেশে নারী সরবরাহসহ ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ফাঁসানোসহ অবৈধ গাড়ি আমদানি—হেন অপকর্ম নেই যা করেননি। দুই হাতে টাকা কামিয়ে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন। দেশে-বিদেশে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। সম্প্রতি আলোচিত মডেল পিয়াসা ও মৌ গ্রেপ্তার হলে এই সিন্ডিকেটের পুরোভাগে উঠে আসে মিশুর নাম।
অনুসন্ধান বলছে, ২০০৩ সালে মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাং গড়ে তোলার মাধ্যমে মিশুর উত্থান। সেসময় পুলিশের হাতে ধরাও পড়েন তিনি। ২০০৪ সালে ছাড়া পেয়ে কোন এক অজানাভাবে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। তবে বছরখানেকের মধ্যেই তিনি ফিরে আসেন। ফেরে তার ভাগ্যও।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৭ সালে পরিচয় ডিজে জামিল-নাতাশার সঙ্গে। কিছুদিনের মধ্যেই তারা শুরু করেন ডিজে ব্যবসা। কিন্তু এর আড়ালে তিনি সিসা, ইয়াবাসহ ভয়ংকর সব মাদকের বাণিজ্য শুরু করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লাবসহ দেশে-বিদেশে নারী সরবরাহের সঙ্গেও জড়িয়ে যান তিনি।
ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছে তরুণী সরবরাহ করে কামান প্রচুর অর্থ। সেই টাকায় গুলশানের পিংক সিটির পাশে খোলেন একটি না সেবন দ্রব্যের স্পট।
মিশু আরও কিছু উপায়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। ধনির দুলালদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতেন। তারপর রাস্তার পাশে আড্ডা দেয়ার সময়, তাদের কাছ থেকে সবকিছু ছিনতাই হতো। আসলে ছিনতাইকারীরাও তারই চক্রের!
বাংলা সিনেমার ভিলেন ডিপজলের স্টাইলে, গরুর পেটে করে দেশের বাইরে থেকে আনতেন মাদক দ্রব্য, হীরা ও স্বর্ণের চালান। এজন্য ডেইরি সান নামের একটি ফার্ম গড়েন তিনি। সেখানে বিদেশি গরু লালন-পালনের আড়ালে চলত মিশুর ইয়াবা বাণিজ্য।
সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত প্রায় সব মডেল-অভিনেত্রীদের সাথে তার গভীর সম্পর্ক। আর তার অর্থের আরেক উৎস- লেটেস্ট মডেলের গাড়ি। বিদেশ থেকে লেটেস্ট মডেলের গাড়ি আমদানি করার কথা বলে, আনতেন পুরনো মডেলের গাড়ি। নিজের মালিকানাধীন ইউরো কার ওয়ার্কশপে সেই গাড়িকে মডিফিকেশন করে, নতুন মডেলে রূপান্তর করতেন। আর দাম নিতেন আকাশছোঁয়া।
সূত্র বলছে, মিশু হাসানের বর্তমান অর্থের পরিমাণ হাজার কোটি টাকার কম না। দেশে-বিদেশ রয়েছে তাঁর বিলাসবহুল বাড়ি। বেশ কয়েকটি দামি গাড়ি তো আছেই। সেগুলোর মূল্য শত কোটি টাকার বেশি।
অবশেষে গত মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে মাসুদুল হাসান জিসান নামে এক সহযোগীসহ মিশুকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এক বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব সদর দপ্তর জানায়, তাঁদের কাছ থেকে একটি অস্ত্র, ছয় রাউন্ড গোলাবারুদ, ১৩ হাজার ৩০০টি ইয়াবা, ফেরারি ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি, সিসার সরঞ্জাম, দুটি ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, বিপুল পরিমাণ এটিএম কার্ড, পাসপোর্ট এবং সাড়ে ৪৯ হাজার রুপির ভারতীয় জাল মুদ্রা উদ্ধার করা হয়।
এর আগে বিভিন্ন অভিযোগে তিনবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মিশু। তাঁর নামে রয়েছে বেশ কয়েকটি মামলা।
মন্তব্য করুন :
