গ্রিস থেকে ঢাকা, যেভাবে লাল গোলাপ ভালোবাসার প্রতীক
সুলতানা জাকিয়া
ভালোবাসার কোনো রং নেই। তাই বলে ভালোবাসা কিন্তু বর্ণহীন নয়। আর তার প্রকাশ ভঙ্গিও হওয়া চাই রঙিন। কেননা ভালোবাসা প্রকাশের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে ভালোবাসার রং। আর এই মাধ্যম যদি হয় ফুল? তাহলে তো কথায় নেই। আর এই ভালোবাসার মাধ্যমের গুরুত্ব বোঝাতেই ৭ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় ‘রোজ ডে’।
গ্রীক মিথোলজি বলছে, রোজ এর বানান একটু এদিক সেদিক করলেই পাওয়া যাবে গ্রীক প্রেমের ঈশ্বর ইরোস এর নাম। আবার প্রাচীন গ্রিসে কিউপিড ইরোস নামে পরিচিত ছিলেন। সৌন্দর্য ও প্রেমের দেবী আফ্রোডিটির ছেলে ইরোস। অন্যদিকে, রোমানরা দেবী ভেনাসের ছেলে হিসেবে কিউপিডকে মান্য করে। ভেনাস তাদের প্রেমের দেবী। আর বলা হয়, আফ্রোডিটি বা ভেনাস তার প্রেমিক অ্যাডোনিসকে খুব ভালোবাসতো। আর প্রেমিকের বিরহে অ্যাফ্রোডিটির বুকে যে রক্তক্ষরণ হতো সেই রক্তে সাদা গোলাপের রং হয়ে উঠেছে লাল। তাইতো ভালোবাসার প্রতীক লাল গোলাপ।
সপ্তদশ শতকে পৌরাণিক এই কাহিনিকে জনপ্রিয় করে তোলেন সুইডেনের রাজা দ্বিতীয় চার্লস। তিনি পার্সিয়া ভ্রমণে গিয়ে ফুলের ভাষা নামে একটি সাংকেতিক ভাষা প্রচলনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এই ভাষা হবে কথা না বলে অনেক কথা বলা। যেমন কেউ যদি কাউকে হলুদ গোলাপ দেয়, তবে বুঝতে হবে সে তাকে হতাশ করেছে। বেগুনী রংয়ের গোলাপ দিলে বুঝতে হবে সে দুঃখিত এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। কেউ যদি লাল গোলাপ দেয় তবে বুঝতে হবে সে গভীর প্রেমে অনুরক্ত।
গোলাপ যদি হয় ভালোবাসা নামক মুদ্রার একপিঠ। তবে লাল গোলাপ ঠিক যেন সেই মুদ্রার অপর পিঠ। ভালোবাসার এই প্রতীকটির দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম নামকরণ করেন ডেনমার্কের রানি আলেকজান্দ্রা।
৫০তম বিবাহবার্ষিকীতে আলেকজান্দ্রা লন্ডনে এলে লন্ডনের অধিবাসীরা তাকে হাজার হাজার লাল গোলাপ দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। আলেকজান্দ্রা এত গোলাপ দেখে তো বাকরুদ্ধ! তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন। এই হাজারখানেক গোলাপ বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে দরিদ্র ও অসুস্থ মানুষদের প্রতি সেবার হাত বাড়িয়ে দিলেন। লাল গোলাপ দিয়ে ‘তার’ মুখে হাসি ফোটানোর জন্য পালিত হয় বিশেষ রোজ ডে।
ভালোবাসার ফুল গোলাপ। ভালোবাসার ভাষা বুঝতে ও বোঝাতে পারে গোলাপ। তাই উপহার হিসেবে গোলাপেরই চাহিদা এখন সবার উপরে। তবে গোলাপ দেয়ার আগে যেনে নিতে হবে, কোন রঙের কী অর্থ? তা না হলে পড়তে পারেন বিপদে। সময় বদলেছে। বদলেছে প্রেমের ধরনও। কিন্তু আজও লালা গোলাপ দিয়েই শুরু হয় প্রেমের নিবেদন। তাইতো এখনও কাঁটাবন কিংবা শাহবাগের ফুলের দোকানগুলোর সামনে দিয়ে একবার হেঁটে গেলে সবারই লাল গোলাপ পাবার সুপ্ত বাসনা জেগে ওঠে।
ভুল করেও কখনো প্রেম নিবেদনের ক্ষেত্রে সাদা গোলাপ দেবেন না। ভালোবাসা প্রকাশে নয় বরং শোক জ্ঞাপনে শান্তির প্রতীক হিসেবে সাদা গোলাপ ব্যবহার করা হয়। জীবন শুরুর প্রতীক হিসেবে নতুন জীবন শুরুর আগে কনের হাতে সাদা গোলাপ দেয়া হয়। বন্ধুত্বের প্রতীক হলুদ গোলাপ। তাই আপনার জীবনে প্রিয় বন্ধু গুরুত্ব বোঝাতে তাকে আজ দিতে পারেন এক গুচ্ছ হলুদ অথবা গোলাপি গোলাপ। কারণ কৃতজ্ঞতার প্রতীক গোলাপি গোলাপ। মনের মানুষকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে জানার ইচ্ছাকে প্রকাশ করে কমলা গোলাপ। কালো গোলাপ খুঁজে পাওয়া অনেক কষ্টসাধ্য। এই ফুল শোকের বার্তাবাহক হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় এর ব্যবহার খুবইকম।