কেন সিআইডির জালে রিং আইডির পরিচালক সাইফুল?
তানজিলা ফাহিম,
গত কয়েক দিন ধরেই আলোচনায় দেশের বেসরকারি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি, ধামাকা, ই-অরেঞ্জসহ আরও কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। প্রতারণার নানা অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। এবার সামনে এলো আরেকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান- রিং আইডি। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজাদ রহমান গণমাধ্যমকে জানান, শুধু কমিউনিটি জবসের নামেই ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ২১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে সামাজিক নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম- রিং আইডি।
তিনি জানান, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন রিং আইডিতে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হওয়া এক ভুক্তভোগী। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেপ্তার হন পরিচালক সাইফুল।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, মামলায় রিং আইডির ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, রিং আইডি গত মে মাসে ২৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, জুন মাসে ১০৯ কোটি ১৩ লাখ, জুলাই মাসে ৭৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা- অবৈধভাবে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে।
মামলায় উল্লেখিত টাকা যাতে বিদেশে পাচার না হয় সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে রিং আইডির অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার অনুরোধ করেছে সিআইডি। প্রতিষ্ঠানটি বিপুল পরিমাণ অর্থ কিভাবে হাতালো, সে বিষয়ে সাইফুলকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সংস্থাটি। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদকে মামলার তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করে ‘রিং আইডি’। ফেসবুকের মতো এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও বিনামূল্যে ভয়েস ও ভিডিও কল, মেসেজিং এবং গোপন চ্যাটিং করা যায়। কানাডায় নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রিং আইডি। তবে, এর প্রায় সব কার্যক্রম বাংলাদেশ ঘিরে।
প্রথম দিকে সোশ্যাল কমার্স নামে গ্রাহকদের কাছে পণ্য বিক্রি করতো রিং আইডি। তবে, গত ২৮শে মার্চ ‘কমিউনিটি জব’ নামে বিশেষ সেবা চালু করে প্রতিষ্ঠানটি। এর আওতায় এজেন্ট ও ব্র্যান্ড প্রমোটার নিয়োগ শুরু করে তারা। এরই মধ্যে কয়েক হাজার এজেন্টের পাশাপাশি পাঁচ লক্ষাধিক ব্র্যান্ড প্রমোটার যুক্ত হয়েছেন প্ল্যাটফর্মটিতে।
জানা যায়, এই প্ল্যাটফর্মে এজেন্ট হতে এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। এজেন্টদের কাজ ব্র্যান্ড প্রমোটার নিয়োগ। বিনিময়ে তারা পান কমিশন।
ব্র্যান্ড প্রমোটারের আছে দুটি ক্যাটাগরি- গোল্ড ও সিলভার। গোল্ড ব্র্যান্ড প্রমোটারকে বিনিয়োগ করতে হয় ২২ হাজার আর সিলভারকে ১২ হাজার টাকা।
রিং আইডির প্রতিষ্ঠাতা কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশি শরিফ ইসলাম ও আইরিন ইসলাম দম্পতি। প্রতিষ্ঠানটির একমাত্র অফিস ঢাকার গুলশানে। সেখানে কাজ করেন ৫০ জনের মতো কর্মী। কিন্তু রিং আইডির দাবি, তাদের প্ল্যাটফর্মে ২ কোটির বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী। এদের ৯৫ ভাগই বাংলাদেশি।