কে এই ইভ্যালির মালিক মোহাম্মদ রাসেল?
রাকিব হাসান
প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছরের মধ্যেই হৈচৈ ফেলে দেয় দেশিয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান — ইভ্যালি। বলা হচ্ছিল শিগগিরই বিশ্বসেরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলীবাবা, আমাজনের কাতারে নাম লেখাবে ইভ্যালি। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। ভীত শক্ত না করে বহুতল ভবন বানানোর মতো ব্যবসা বাড়াতে গিয়ে হোচট খেয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস দাবি করা প্রতিষ্ঠানটি।
গ্রাহকের করা প্রতারণা মামলায় প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারেরা ধরা পড়ার পর বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র্যাব বলছে, ইভ্যালি ব্যবসার চেয়ে প্রতারণামূলক কার্যক্রম চালিয়েছে বেশি। সামান্য বিনিয়োগের প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনাই ছিল পণ্য সরবরাহকারী এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়া।
গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা তুলে নিতে ইভ্যালিতে নিয়মিত থাকতো বড় অংকের ছাড় আর ক্যাশব্যাক অফার। গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জনে অভিনেত্রী থেকে শুরু করে জনপ্রিয় গায়ক, হালের তরুণ সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের বানানো হতো ব্যান্ড এ্যাম্বাসেডর।
ইভ্যালির উত্থানের জন্য প্রসংশা পাবেন যিনি, পতনের জন্যও দায়ী তিনি। বলছি মালিক মোহাম্মদ রাসেলের কথা। অনেকটা ‘ওয়ান ম্যান শো’ হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ইভ্যালি।
রাজধানীর রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০০১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন রাসেল। ২০০৭ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ২০০৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করেন এমবিএ।
স্নাতকোত্তর শেষে ২০০৯ সাল হতে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটি কোচিং সেন্টারে পড়াতেন রাসেল। ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি যোগ দেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে। কাজ করেন ৬ বছর। ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার পদে থাকা অবস্থায় ব্যাংকের চাকরি ছাড়েন রাসেল। শুরু করেন শিশুদের ব্যবহার্য পণ্য নিয়ে ব্যবসা। একপর্যায়ে ওই ব্যবসা বেচে দিয়ে এক কোটি টাকা পুঁজিতে শুরু করেন ইভ্যালি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় ইভ্যালির কার্যক্রম।
ইভ্যালিতে রাসেল দায়িত্ব নেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে। তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে বসান চেয়ারম্যানের পদে। বলা হয় ইভ্যালির প্রতারণায় রাসেলের প্রধান সহযোগী তার স্ত্রী।
ব্যবসার শুরুতে রাসেল রাজধানীর ধানমন্ডিতে ভাড়ায় একটি অফিস ও একটি গ্রাহক সেবাকেন্দ্র চালু করেন। এছাড়া ঢাকার অদূরে আমিনবাজার ও সাভারে ভাড়া করা জায়গায় দুটি গুদামও চালু করেন। একপর্যায়ে এই প্রতিষ্ঠানেই নিয়োগ পান ২ হাজার কর্মকর্তা এবং ১৭০০ কর্মচারী।
গত তিন বছরে কোন লাভের মুখ দেখেনি প্রতিষ্ঠানটি। অথচ প্রতিনিয়ত নানা রকম অবিশ্বাস্য অফার দিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে গ্রাহকের অর্থ। নতুন গ্রাহকের টাকা থেকে পুরাতন কিছু গ্রাহককে পণ্য দিলেও সেটা ছিলো নিতান্তই হাতেগোনা। ফলে বাড়তে থাকে দায়। যা শেষে গিয়ে দাড়ায় প্রায় হাজার এক হাজার কোটি টাকায়।
টাকা দিয়ে পণ্য না পেয়ে ক্রমেই ফুসে উঠেন ক্রেতারা। প্রতারণা ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগে কয়েক জেলায় ইভ্যালির বিরুদ্ধে মামলাও ঠুকে দেন কিছু গ্রাহক। আর সবশেষ ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন এক ভুক্তভোগী। রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্ত্রীসহ র্যাবের হাতে ধরা পড়েন রাসেল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল র্যাবকে জানিয়েছেন, ইভ্যালির ব্যাংক হিসাবে এখন আছে মাত্র ৩০ লাখ টাকা। এর বাইরে বিভিন্ন লেনদেন মাধ্যমে আটকে আছে ইভ্যালির ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা, যেগুলোর মালিক গ্রাহকেরা। আর রাসেলের ব্যক্তিগত সব সম্পদের মূল্য মাত্র সাত কোটি টাকা। তাই, হাজার কোটি টাকার দেনা যে রাসেল শোধ করতে পারছেন না, তা নিশ্চিত। আর রাসেলের ইভ্যালিতে বিনিয়োগকারীরাও নিশ্চিতভাবেই নিঃস্ব হচ্ছেন।